সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্ধু শাহাদাত হোসেন খানের খোঁজে

ফরিদুর রেজা সাগর

বন্ধু শাহাদাত হোসেন খানের খোঁজে

এই মুহূর্তে খুব ইচ্ছা করছে বন্ধু শাহাদাত হোসেন খানের সঙ্গে দেখা করতে। কোথায় আছে, কেমন আছে- জানতে ইচ্ছা করছে। তার সঙ্গে আর দেখা হবে না। তার সঙ্গে দেখা হলেই বলত, একদিন আড্ডা হবে, গল্প হবে। তোমাকে সরোদ বাজিয়ে শুনাব। শাহাদাত হোসেন খানের ডাক নাম ছিল শাহীন। আমরা তাকে শাহীন নামে ডাকতাম।

একসময় শাহাদাত হোসেন খানের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো টেলিভিশনের ডিআইটি বা রামপুরা চত্বরে। কত কথা হতো! কত আড্ডা। আমরা তখন ছোটদের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতাম। মনে পড়ে, সেই সময় আমরা কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের বইগুলো এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতাম। কুয়াশা চরিত্রটি ছিল খুব রহস্যময়। কুয়াশা অবসরে খুব মনোযোগ দিয়ে সরোদ বাজাত। এই সরোদ বাজানোর ব্যাপারটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়। পরে শুনেছি কাজী আনোয়ার হোসেন নিজেও সরোদ বাজাতেন।

বন্ধু শাহাদাত হোসেন খান ছোটবেলা থেকেই সরোদ বাজায়। আমি উচ্চাঙ্গ সংগীত তেমন বুঝি না। কিন্তু বন্ধু শাহাদাত হোসেন খান যখনই বিটিভির অনুষ্ঠানে বা বিটিভি চত্বরে কোথাও বসে সরোদ বাজাত আমি মুগ্ধ হয়ে তা দেখতাম। তার মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় আমি তার ভক্ত হয়ে গেলাম। আমৃত্যু তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। তবে গল্পটা এখানে নয়। নতুন কুঁড়িতে প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের তখন কিশোরকাল। নতুন কুঁড়িতে বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা আছে। ওই পর্বে বিচারক হিসেবে আছেন ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান। তিনি শাহাদাত হোসেন খানের পিতা। পিতা যখন বিচারক, পুত্র তখন সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না। শাহাদাত হোসেন খান ছোটবেলায় কোনো দিন নতুন কুঁড়িতে অংশ নিতে পারেনি। যদিও শাহাদাত হোসেন খান পরবর্তীতে সুখ্যাত যন্ত্রশিল্পী হিসেবে একুশে পদকও পেয়েছেন। তার দুই যমজ মেয়েও যন্ত্রশিল্পী। শাহাদাতের প্রয়াণে যেন যুগের অবসান হলো। ওস্তাদ আবেদ হোসেন খানের বিচারকাজ খুব কঠিন। নম্বর শিট দেখে আমি হঁ হয়ে গেলাম। প্রযোজক কাজী কাইয়ুমের কাছে এই শিট নিয়ে যাব কীভাবে? ছুটে গেলাম শাহাদাতের কাছে। সেও খুব নির্বিকারভাবে বলল,

বাবা যা মনে করেছেন সেই নম্বর দিয়েছেন। এ নিয়ে বলার কিছু নেই।

ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান সবাইকে ‘মাইনাস’ নম্বর দিয়েছেন। অর্থাৎ কেউ মানোত্তীর্ণ নয়। আমি কীভাবে নম্বর দেব? বিখ্যাত পিতার এই নিষ্ঠা ও সততা সারা জীবন বহন করেছেন সরোদ বাদক শাহাদাত হোসেন খান। নিজের মতো সাধারণ জীবন যাপন করতেন। খ্যাতি ও অর্থের পেছনে দৌড়াননি। রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু থাকতেন খুব নিরিবিলি। লোকচক্ষুর আড়ালে। বলতে দ্বিধা নেই এমন উচ্চ স্তরের শিল্পীকে আমরা সবসময় সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি না। তার মৃত্যুর পর কোথায় কবর দেওয়া হবে তা নিয়ে নানা সিদ্ধান্তহীনতা। শেষে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার  ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের মাধ্যমে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। যারা কিছুটা আড়ালে থাকেন তাদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। বন্ধু... তোমার কাছে যাব, আড্ডা দেব- সেই উপায় আর নেই। লেখক : কথাসাহিত্যিক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর