সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয় : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহতের ঘোষণা যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি দুটো এক জিনিস নয়, বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভাস্কর্য বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরিদুল হক বলেন, ‘ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। পাকিস্তানে যান, ভারতে যান, সারা বিশ্বে যে কোনো রাষ্ট্রে যান না কেন, সব জায়গায় ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য যদি মূর্তি হয়, তাহলে টাকার ভিতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। আগে যারা ছিলেন তাদের ছবি ছিল। সেগুলো পকেটে নিয়ে তো সবাই ঘুরে বেড়ায়।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভাস্কর্য আর মূর্তি নিয়ে ‘বোঝার ভুল’ আছে। মিসরে গিয়ে দেখেছি। সৌদি আরবেও আছে। বাংলাদেশে যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, তাদের চিন্তা করতে হবে যে মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়।’ এ বিষয়গুলো সবাইকে বোঝাতে পারলে একটা সমাধান আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো নতুন এই মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করব, ভাবব এবং পরামর্শক্রমে কীভাবে করলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে... সার্বিক দিক থেকে এসব বিষয় যাতে কেউ না করতে পারে, করার সুযোগ না পায়... সবকিছু চিন্তা করে অবশ্যই আমি করব। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা চাই।’

ভাস্কর্য আর মূর্তি যদি আলাদা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এর অর্থ কি এমন হতে পারে যে ভাস্কর্য রক্ষা করা যেতে পারে, আর মূর্তি...? এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘না না মোটেই না। সনাতন ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন। এটা নিয়ে তো কোনো দিন কিছু হয়নি।’

তিনি ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম, সে সময় আমার এলাকায় সনাতন ধর্মের একটি মূর্তিও কেউ ভাঙতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, যার যার ধর্ম পালন করব। আমরা সবাই কমবেশি জানি, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু দুষ্ট লোক থাকে, যারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সব দুষ্টচক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।’ ভাস্কর্যের বিরোধিতা যারা করছেন, তাদের উদ্দেশে কী বার্তা দেবেন- জানতে চাইলে ফরিদুল হক বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলেছি, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি বসব, আলোচনা করব, চিন্তা করব।’

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেন, আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই কিন্তু তার বক্তব্য দিয়েছেন। অতএব আপনারা (সাংবাদিক) একটু ধৈর্য ধরুন। আমরা অবশ্যই এর একটি সমাধানের জন্য... যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন, তা আলোচনা সাপেক্ষে করব ইনশা আল্লাহ।’

অস্থির না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটা জিনিসকে সূক্ষ্মভাবে, নিজেদের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করব।’

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ষড়যন্ত্র প্রতিহতের ঘোষণা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার নামে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের মদদে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। তারা যে কোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা দেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের নেতারা।

বিক্ষোভ করবে যুবলীগ : গতকাল বিকালে গুলিস্তান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে যুবলীগ। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

এ সময় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে বিএনপি-জামায়াতের মদদে ধর্মান্ধ মৌলবাদী ও পুঁজিবাদীরা নতুন নাটক শুরু করেছে। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদীরা আজ ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামনুর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাঈন উদ্দিন রানা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

মামুনুল হককে প্রতিহত করার ঘোষণা স্বেচ্ছাসেবক লীগের : গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ সময় নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাংলার ঐতিহ্য। ভাস্কর্য বাঁচিয়ে রাখে ইতিহাস। বিএনপি জামায়াতের মদদপুষ্ট উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার নামে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আসছে!

সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, মৌলবাদ ধর্মের নামে অপব্যাখ্যাকারী ফতোয়াবাজ কথিত মাওলানা মামুনুল হককে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে। সংগঠনের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সহ-সভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক, মজিবুর রহমান স্বপন, আবদুল আলীম বেপারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম প্রমুখ।  এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতির এক বছর পূর্তিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিত্বে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য অপসারণের জন্য হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. সায়ীদুর রহমান, কার্যকরী সভাপতি মো. সাইফুল আলম মানিক ও সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের নেতৃত্বে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন নেতৃবৃন্দ। পরে বেলা ১২.০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের প্রধান কার্যালয় ১৯, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ (নিচ তলায়) মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর