মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পৌর ভোটে যেসব কারণে অযোগ্য হবেন প্রার্থী

গোলাম রাব্বানী

পৌরসভা নির্বাচনে ১৯ কারণে অযোগ্য হবেন প্রার্থীরা। মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে হলে প্রার্থীদের ১৯টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী- মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে প্রার্থী কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। এক্ষেত্রে গৃহনির্মাণ ও ক্ষুদ্র কৃষিঋণ অন্তর্ভুক্ত হবে না।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিশেষ নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠিয়েছেন। এতে প্রার্থীর প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে চার শর্ত এবং অযোগ্য হওয়ার ১৯টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। পৌরসভা আইন-২০০৯-এর ১৯ ধারায় প্রার্থীর অযোগ্যতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি তিনি (প্রার্থী) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন বা হারান, কোনো উপযুক্ত আদালতের বিচারে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন। দেউলিয়া ঘোষিত হন এবং দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন, তবে তিনি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হবেন।

এ ছাড়া যদি কেউ কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তার মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। কেউ যদি প্রজাতন্ত্রের বা পৌরসভার অথবা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন, তিনিও পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। আবার বিদেশি কোনো রাষ্ট্র থেকে অনুদান বা তহবিল গ্রহণ করে এ ধরনের বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী পদে থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ বা পদচ্যুতির পর এক বছর অতিবাহিত না হয়, তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া তার (প্রার্থীর) পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হন বা এর জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা পৌরসভার কোনো বিষয়ে তার কোনো ধরনের আর্থিক স্বার্থ থাকে, তবে এ ধরনের ব্যক্তিও নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে (প্রার্থী) কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখলে, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে গৃহনির্মাণ ও ক্ষুদ্র কৃষিঋণ অন্তর্ভুক্ত হবে না।

আবার এমন কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদাররা যার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে খেলাপি রাখেন, তবে এ ধরনের ব্যক্তিও নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। পৌরসভা থেকে গৃহীত কোনো ঋণ অনাদায়ী হলে, দায়কৃত অর্থ পৌরসভায় পরিশোধ না করলে, পৌরসভার তহবিল তছরুপের কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হলে বা অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা জাতীয় সংসদের সদস্য হন; তবে তিনি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।

কোনো সরকারি বা আধা সরকারি দফতর, কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সমবায় সমিতি বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের চাকরি থেকে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরিচ্যুত, অপসারিত হলে বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।

এ ছাড়া দন্ডবিধির ১৮৯ ও ১৯২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হন;  বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় দন্ডবিধির ২১৩, ৩৩২, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হন; জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন এবং কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসেবে ঘোষিত হন; তাহলে তিনিও নির্বাচনের অযোগ্য হবেন।

অন্যদিকে কোনো সমবায় সমিতি এবং সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ব্যতীত, সংশ্লিষ্ট পৌর এলাকায় সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য, তার নিজের নামে বা তার ট্রাস্টি হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নামে বা তার সুবিধার্থে বা তার উপলক্ষে বা কোনো হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে, এ ধরনের কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হন, তবে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে এই অযোগ্যতা কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না যেই ক্ষেত্রে-চুক্তিটিতে অংশ বা স্বার্থ তার ওপর উত্তরাধিকারসূত্রে বা উইলসূত্রে প্রাপক, নির্বাহক বা ব্যবস্থাপক হিসেবে হস্তান্তরিত হয়, যদি না তা হস্তান্তর হওয়ার পরে ছয় মাস অতিবাহিত হয়; অথবা কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) সংজ্ঞায়িত কোনো পাবলিক কোম্পানির দ্বারা বা পক্ষে চুক্তি হয়েছে, যার তিনি একজন শেয়ারহোল্ডার মাত্র, তবে তার অধীনে তিনি কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত পরিচালক নন বা ম্যানেজিং এজেন্টও নন; অথবা তিনি কোনো যৌথ হিন্দু পরিবারের সদস্য হিসেবে চুক্তিতে তার অংশ বা স্বার্থ নেই, এ ধরনের কোনো স্বতন্ত্র ব্যবসা পরিচালনাকালে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য কর্তৃক চুক্তি সম্পাদিত হয়ে থাকে।

প্রার্থীর যোগ্যতা : প্রার্থীর প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে চার শর্ত রয়েছে। পৌরসভা আইন-২০০৯-এর ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, মেয়র বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে আগ্রহীকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। যার বয়স হবে অন্তত ২৫ বছর। মেয়র পদের জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার যে কোনো ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে। আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে।

উল্লেখ্য, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর