শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আদেশ দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না : হাই কোর্ট

কারাগারে বিয়ের পর আসামির জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের এক মামলার বাদীকে বিয়ের পর আসামিকে জামিন দেওয়ার সময় হাই কোর্ট বলেছে, কোনো শর্ত দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। এখন সমাজে মানুষের সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, ভাঙতেও সময় লাগে না। জামিন শুনানিতে পত্রিকার কিছু প্রতিবেদন এবং নারীবাদী কয়েকটি সংগঠনের বক্তব্যের সমালোচনাও করেছে আদালত।

ধর্ষণ মামলার আসামি ফেনীর জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনকে গতকাল এক বছরের জামিন দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। মামলার বাদীকে বিয়ে করায় জিয়ার জামিনের আবেদনটি বিবেচনায় নিয়েছে আদালত। ফেনীর কারা ফটকে ধর্ষণ মামলার আসামি জিয়ার সঙ্গে অভিযোগকারী তরুণীর বিয়ের ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নারী অধিকার কর্মীদের অনেকে বিষয়টির সমালোচনাও করছেন। হাই কোর্টে গতকাল জিয়ার জামিন শুনানির সময়ে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেন, আমরা তো নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে দু-একটি পত্রিকার রিপোর্ট দেখে খুব অফেন্ডেড হয়েছি। যেখানে লেখা হয়েছে ‘ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে’। এভাবে তো রিপোর্ট হওয়া উচিত না। আবার নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের বিয়েতে ধর্ষকেরা উৎসাহিত হবে। যে যা-ই সমালোচনা করুক, আমরা এটাকে উৎসাহিত করব মন্তব্য করে হাই কোর্ট বলেন, প্রযুক্তির কারণে এখন সমাজে মানুষের সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, ভাঙতেও সময় লাগে না।

 দেখবেন আমাদের দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। শিক্ষিত লোকদের মধ্যে বেশি হচ্ছে, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম।

শুনানিতে জামিন প্রার্থনা করে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী বলেন, যেখানে মামলায় মেয়েটা বলছে, আমি তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসি, তার সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হয়েছে। এখানে দেখতে হবে অন্যায় কিছু হয়েছে কিনা। মেয়েটা বলছে, আমার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক, কিন্তু বিয়ে না করায় থানায় মামলা করা হয়েছে। এটা নিয়ে জজ কোর্টেও আপস করার চেষ্টা করেছে মেয়েটি। তারপর তারা হাই কোর্টে এসেছে। সবার উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে, এখানে অন্যায়ের কী হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বিয়েটি টিকিয়ে রাখতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে বলেন, বিয়ের কারণে এখন জামিন হয়ে গেল। পরে যাতে এই সংসার ভেঙে না যায় সে জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া যায় কিনা ভেবে দেখবেন।’ এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘মিস্টার ডিএজি ঘর সংসার কি কোনো কঠোরতা দিয়ে টেকানো যাবে। ১৫-২০ বছর সংসার করার পরেও ঘর ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষিত লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দুজনই কোর্টে এসেছেন। তাদেরও এতদিনের ঘর সংসার ভেঙে গেছে। আদেশ নিষেধ নিয়ে কি ঘর সংসার টিকানো যাবে!

জামিনের অপব্যবহার হলে ওই নারীর সামনে অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয় হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, আমরা আশা করব সংসারটা ভালোভাবে চলুক। বিয়ে প্রতারণামূলক হলে একাধিক মামলাও হবে।

ফেনীর কারাগারে বন্দী জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে গত ১৯ নভেম্বর বিয়ে হয় ওই নারীর। একই ঘরে অবস্থান করা অবস্থায় গত ২৭ মে ভোরে গ্রামবাসী জিয়া ও অভিযোগকারী মেয়েটিকে আটক করে। স্থানীয়রা দুজনকে বিয়ে দিতে চাইলে জিয়া ও তার পরিবার এতে রাজি হয়নি। সেদিন মেয়েটি সোনাগাজী থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই জিয়াকে গ্রেফতার করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর