শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে কেন বারবার আগুন

► আট মাসে জ্বলেছে পাঁচ উপকেন্দ্র ► পুরনো যন্ত্রপাতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা

জিন্নাতুন নূর

দেশে গত আট মাসে পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে (সাবস্টেশনে) আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অগ্নিকান্ড ঘটলেও বাকিগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এর ফলে গ্রাহকরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, এর রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থও ব্যয় হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, উপকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে পড়ার কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রগুলোতে ত্রুটি থাকায় তা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য তারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কমাতে এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতি বেশি পুরনো হয়ে যাওয়ার আগেই তা বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, গত আট মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচবার বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে বড় ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে যায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন-বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র ট্রান্সফরমারসহ নানা সরঞ্জাম। এতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে ওই কেন্দ্রগুলোর আওতাধীন এলাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, একেকটি উপকেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনা ভিন্ন। নানা উপকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের জন্য তদন্ত করা হয় বিভিন্ন সময়। বিস্তারিত পর্যলোচনা করা হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণেই যদি অগ্নিকান্ড ঘটত, তবে তা সমাধান করা সম্ভব হতো। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ একাধিক। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোনোটি পুরান হয়ে যাওয়ায়, আবার কোনোটির বিতরণব্যবস্থার ত্রুটির কারণে উপকেন্দ্রগুলোতে অগ্নিকান্ড ঘটে। আবার কোনো কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি অকার্যকর হয়ে পড়ার জন্যও ঘটে আগুন লাগার ঘটনা। কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ম্যানুফ্যাকচারিং সমস্যাও এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে বহু জায়গায় উপকেন্দ্রগুলো পুরনো হয়ে পড়েছে। আর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও এগুলো নিয়মিত তদারক না করলেই দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়। সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ১৭ নভেম্বর সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে প্রায় ৫৫ ঘণ্টা সিলেট মহানগরসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। জানা যায়, ১৯৬৭ সালে নির্মিত এ উপকেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর পরও তা নানাভাবে সংস্কার ও বর্ধিত করে কাজ চালানো হচ্ছিল। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীতে আগুনে পুড়ে যায় ট্রান্সফরমার। এর দুই দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর একই উপকেন্দ্রে আরেক দফা আগুন লাগে। ফলে প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় বিদ্যুৎসেবা বিঘিœত হয়। ১১ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর রামপুরার উলন গ্রিডে অগ্নিকা- ঘটে। এতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। এ ছাড়া ২০ মে কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারা সাবস্টেশনে আগুন লাগে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ওই অগ্নিদুর্ঘটনা হয় বলে জানায় পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তিন থেকে চারটি ট্রান্সফরমার পেয়েছি, যেগুলোর যন্ত্রপাতির ম্যানুফ্যাকচারিং সমস্যা ছিল। এ ক্ষেত্রে এই যন্ত্রপাতিগুলো আমরা যাদের কাছ থেকে নিয়েছিলাম তাদের দিয়েই আবার পুনঃস্থাপন করিয়ে নিচ্ছি। আবার কিছু পেয়েছি, যেগুলোর যন্ত্রপাতি অনেক পুরনো। এমনও হয়েছে, শুধু কোনো একটি ছোট যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় এর প্রভাব বড় যন্ত্রের ওপর পড়ে উপকেন্দ্রে অগ্নিকান্ড ঘটে। এমন দুর্ঘটনা কমাতে এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যন্ত্রপাতি বেশি পুরনো হয়ে যাওয়ার আগেই তা বদলাতে হবে। আমরা কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি আলাদা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি যেহেতু একটি বড় সিস্টেম, তাই এর বাস্তবায়নে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আবার সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নে নানা সমস্যা ও আর্থিক বিষয় আছে। কারিগরিভাবে নতুন ব্যবস্থা তৈরির বিষয়টিও রয়েছে। তবে এগুলোর কাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর