শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা

বিচারকের প্রতি অনাস্থা ২২ আসামির আইনজীবীর

আদালত প্রতিবেদক

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার শুনানিতে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সাক্ষীকে জেরা না করে এজলাস ত্যাগ করেছেন ২২ আসামির আইনজীবীরা। গতকাল ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের প্রতি এ অনাস্থা জানানো হয়।

অনাস্থা আবেদনে বলা হয়, এ আদালতে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই অন্য যে কোনো আদালতে এ মামলা স্থানান্তরের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করা হবে। সেজন্য এ মামলার কার্যক্রম দুই সপ্তাহ মুলতবি রেখে সময় দেওয়ার আবেদন করেন কারাগারে আটক ২২ আসামির আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মনজুরুল আলম মঞ্জু ও আজিজুর রহমান দুলু সাংবাদিকদের জানান, সিআইডির                বিশেষজ্ঞ রবিউল আলম এ মামলার ৩৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ইতিপূর্বে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তার জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আসামিপক্ষকে না জানিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে আবারও তাকে এনে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং আমরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঞা জানান, মামলার শেষ পর্যায়ে এসে আসামিপক্ষ বিচার বিলম্বিত করার জন্য এসব করছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ কুষ্টিয়া থেকে এসে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে একই সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনীক সরকার, বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, বহিষ্কৃত সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, ইসতিয়াক হাসান মুন্না, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির ও আকাশ হোসেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ ও মোয়াজ আবু হোরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, এসএম মাহমুদ সেতু। এজাহারের বাইরের ছয় আসামি হলেন-বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, মাহামুদ সেতু ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম। পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন- ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মাহমুদুল জিসান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের মুজতবা রাফিদ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ৬ অক্টোবর রাত ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত আবরারকে পেটানো হয়। ২টা ৫০-এর দিকে ডাক্তার তাঁকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে পেটানো হয়েছে। আবরারকে হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১১ জন। তারাই আবরারকে কয়েক দফায় মারপিট করে। বাকি ১৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর