শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রের পিলারগুলো অতীতের চেয়ে শক্ত

------ অসীম কুমার উকিল

গণতন্ত্রের পিলারগুলো অতীতের চেয়ে শক্ত

১৯৯০-এর আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি বলেছেন, গণতন্ত্রের যে পিলারগুলো যেমন, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ এই পিলারগুলো অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। সেদিনের আন্দোলনের ফলে আজকে আমাদের অর্থনীতির সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী। এতেও আত্ম সন্তুÍষ্টির সুযোগ নেই। তবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। গণতন্ত্রের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়েছে বলে মনে করি না। মৌলবাদ জঙ্গিবাদী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

অসীম কুমার উকিল বলেন, মোটা দাগে আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেছিলাম তা হলো ক্ষমতার পালাবদল হবে জনগণের ভোটে। রাতের আঁধারে নয়। হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্র শেষ হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। সেই প্রত্যাশা ’৯০ উত্তর জায়গায় পূরণ হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমরা মনে করি সংসদ হবে সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। জাতীয় সংসদ এখন সচল হয়েছে। জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করে। আমাদের অন্যতম দাবি দাওয়ার মধ্যে ছিল চাকরির বয়স ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে। তা বাস্তবায়ন হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সার্বজনিন শিক্ষা কমিশন হবে। তাও বাস্তবায়ন হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগ পৃথকীকরণ হবে। তাও হয়েছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তাও হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য অধিকার আইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রেডিও টেলিভিশনের স্বায়ত্ত শাসনের দাবি ছিল। তাও হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ছাত্রদের একটি লক্ষ্য ছিল শিক্ষাঙ্গন হবে সন্ত্রাসমুক্ত। তা পূরণ হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে আর অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পাওয়া যায় না। আমাদের আরেকটি দাবি ছিল মানবতাবিরোধীদের বিচার করতে হবে। সে বিচারও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হয়েছে- আবার চলমান রয়েছে। আমাদের দাবি ছিল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। এটা এখনো পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি তা বলব না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর স্বৈরাচার শাসকগণ ধর্মব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। সেই থেকে মৌলবাদীদের অর্থনীতি শিকড় গেড়ে বসেছে। ফলে সেই শিকড় সমূলে উৎপাটনের সংগ্রাম এখনো চলছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় রাজনীতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় উন্মাদনা মোকাবিলা করে অগ্রসর হতে হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির যে মেরুকরণ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট কিংবা মহাজোট তার প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বে যে জোট আছে, সেখানে ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রর, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ যেমন আছে, তেমনি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল জামায়াতও আছে। আমাদের প্রত্যাশা ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব এবং মাহমুদুর রহমান মান্নারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সে কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জামায়াতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, এদেশে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো প্রভাবকের ভূমিকায় থাকে। কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদসহ নানা দল রয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু বাম রাজনৈতিক দলের অবস্থান না ঘরকা, না ঘটকা। এখন সময় এসেছে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার। তারা না আওয়ামী লীগের জোটে, না বিএনপি জোটে। আমি বিশ্বাস করি বাম রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এক সঙ্গে লড়লে আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হব। আমার আহ্বান থাকবে বাম গণতান্ত্রিক ধারক বাহক যারা তারা একটা জায়গায় এসে দাঁড়াবেন।

সর্বশেষ খবর