শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি গণতন্ত্র

------ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল

এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি গণতন্ত্র

নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেছেন, টানা নয় বছরের ছাত্র-জনতার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম আর অসংখ্য শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে ’৯০-এর ঐতিহাসিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতন হয়েছিল। দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

সংসদীয় ধারার রাজনীতিরও শুভসূচনা ঘটেছিল। তার পরের ইতিহাস গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

’৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের বিদায় এবং পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সহসম্পাদক এ মন্তব্য করেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, আজ ২০২০-এ আমরা দাঁড়িয়ে। ’৯০-এর পর ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। আগামী বছরই আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা আর ’৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল গণতন্ত্র, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা কেবল গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের মৌলিক অধিকার, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন এবং সরকার বদলের চিরস্থায়ী ধারা কায়েমের জন্যই মরণপণ লড়াই করে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়েছিলাম। আজ সেই দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই! মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, গণতন্ত্র আজ ক্ষমতাসীনদের কারাগারে বন্দী। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। গোটা নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সভা-সমাবেশ, মত প্রকাশের সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে এক ব্যক্তি ও বিশেষ একটি দলের বিনা ভোটের জবরদস্তিমূলক স্বেচ্ছাচারের নিষ্ঠুর শাসন কায়েম করা হয়েছে। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধহীন সরকারের শাসনে গণতন্ত্রহীন পরিবেশে খুন, গুম, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের দেশ ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় পৃষ্ঠপোষকতায় নানা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দুষ্কর্মের কারণে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তলানিতে ঠেকেছে। তথাকথিত উন্নয়নের আড়ালে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান একে একে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বাংলাদেশ আমরা চাইনি। এ জন্য আমরা ’৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করিনি। তিনি আরও বলেন, এ বাংলাদেশের জন্য ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আর ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে শহীদরা জীবন দেননি। লাখো শহীদের আত্মদানে মুক্ত স্বদেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটের মালিকানা জনগণের হাতে আবার তুলে দিতে হবে। গণজাগরণের মধ্য দিয়ে আবারও গণতান্ত্রিক মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন সামাজিক ন্যায়বিচারের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আমরা ফিরে পাব।

সর্বশেষ খবর