শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নব্বইয়ের মৌলিক চেতনাটা পুনরায় তুলে ধরতে হবে

------ নুর আহমেদ বকুল

নব্বইয়ের মৌলিক চেতনাটা পুনরায় তুলে ধরতে হবে

নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমেদ বকুল বলেছেন, আজকে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা সত্য কথা। কিন্তু সমাজে স্বস্তি নেই। সমাজে স্বস্তি আনতে না পারলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না। সমাজে স্বস্তি আনতে হলে নব্বইয়ের মৌলিক চেতনাটা পুনরায় তুলে ধরতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।  

নুর আহমেদ বকুল বলেন, যে কোনো আন্দোলনের লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব হয়। আমরা যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেটা যদি ধরে রাখতে না পারি তাহলে হবে না। তেমনি একটি আন্দোলনেও তাই। আন্দোলনের লক্ষ্যটা ধরে রাখার কাজটা আমাদের সমাজে যেভাবে হওয়ার দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমরা এরশাদের পতন চেয়ে আন্দোলন করেছিলাম। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের যে মৌলিক শর্ত সেগুলো প্রতিষ্ঠার জায়গা, সমতার জায়গা, ন্যায্যতার জায়গা, ভোটের অধিকার, সামাজিক অধিকারগুলো হচ্ছে সত্যিকারের গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্র এখনো আমাদের কাছে অধরা রয়ে গেছে।  ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমেদ বকুল বলেন, সেই সময়ে আমরা তিন দলের রূপরেখা তৈরি করেছিলাম, যেসব দাবিনামা ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল মুক্তিযুুদ্ধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের যে চারটি পিলার, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র। এরশাদ সাহেব রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে ধর্মীয় রাজনীতির বীজ বপন করেছিলেন। যার সূত্রপাত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আজকে কোথায় এসে দেশ দাঁড়িয়েছে? ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর আক্রমন শুরু করেছে। পুড়িয়ে দেবে, জ্বালিয়ে দেবে-এমন হুমকি দিচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, আমরা নব্বইয়ে যে চেতনা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, সেই জায়গা থেকে সরে এসেছি। সে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন? দুই মেয়াদে বিএনপি-চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এতদিন পরও ধর্মীয় উন্মাদনা এটা আমাদের বড় ধরনের বিপর্যয়। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চার পিলার, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রের আলোকে দাঁড় করিয়ে আমরা রেহাই পেতে পারি। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার গড়তে পারব। যে দেশে নিয়ম-নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা হবে না, গণতন্ত্র থাকবে না, সেখানে মনন তৈরি হবে না।

তিনি বলেন, আমরা একমুখী শিক্ষার জন্য লড়াই করেছি। অথচ এখন বারোমুখী শিক্ষা চলছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবেন কীভাবে? এখানে একমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন থেকে দুর্নীতি, লুটপাট, সমাজের দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংকে লুটপাট বন্ধ করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নিজেরাই কেউ কাউকে হাইব্রিড, কেউ প্যারাস্যুট নেতা বলে। এ রকম রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে হবে।

নুর আহমেদ বকুল বলেন, নব্বইয়ের আন্দোলনে আমরা গণদুশমনদের বিচার চেয়েছিলাম। আজকে সেইসব গণদুশমনরাই কেউ কেউ উপদেষ্টা হচ্ছেন, কেউ কেউ বড় ব্যবসায়ী হচ্ছেন। বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এখনো সময় আছে নব্বইয়ের আন্দোলনের চেতনা আবার তুলে ধরতে হবে। মৌলিক অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজকে ৩০ বছর পার হয়ে গেল। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। আমেরিকাতে ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে হুমকি-ধমকির মধ্যেও একটা ভোট হলো। সেই ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আমাদের দেশেও ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় কানাগলি খুঁজে বেড়ানো হয়। জনগণের কাছে যাওয়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারছি না। বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। দেশের জনগণ ধান ফলাচ্ছে, বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে আছি। সবজি ফলাচ্ছে। যুবসমাজ আমাদের রেমিট্যান্স দিচ্ছে। আজকে দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা সত্য কথা। কিন্তু সমাজে স্বস্তি নেই। প্রতিটি জনগণের পক্ষে যদি এই উন্নয়ন নিতে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পিলারগুলো মজবুত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর