রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করতে হবে

-শফি আহমেদ

অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করতে হবে

নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা শফি আহমেদ বলেছেন, নব্বইয়ে আমরা যে চেতনা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, গত ৩০ বছরে সামাজিক সূচকেও দেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। এখন  জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম বেগবান করতে হবে ১৯৭১ ও ১৯৯০-এর চেতনায়।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। শফি আহমেদ বলেন, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ যখন তৎকালীন সেনাপ্রধান লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই সামরিক আইন জারি করেন। সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করে ছাত্ররা। 

আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা অঘটন-ঘটনের নায়ক ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসব ক্ষত ও দুর্বল স্থান আছে, সবগুলোই সৃষ্টি করে গেছেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদ। আর এর জন্য সমাজকে মূল্য দিতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসকে কেন্দ্র করে মজিদ খানের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাতিলের বিরোধিতা করে ছাত্র সংগঠনগুলো। ওই বছরের নভেম্বরে সব ছাত্র সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ ফোরাম ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। ক্যাম্পাসে ছাত্ররা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, কাঞ্চন, মোজাম্মেল, জাফর ও দীপালি সাহা। এ রক্তের ধারা গড়ায় অনেক দূর। মিশে যায় রাউফুন বসুনিয়া, রমিজ, তিতাস, মুনীর, জুয়েল, ডা. মিলনের রক্তে। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালে মিছিলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনা আন্দোলনে গতি এনে দেয়। ক্ষমতার শেষের দিকে আবারও সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন এরশাদ। কিন্তু গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

শফি আহমেদ বলেন, স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র এনেছি। গত কয়েক মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর দেশের দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড়আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি  বলেন, অন্যদিকে বাংলাদেশ বর্তমানে একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আছে। একদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, দেশে আইনের শাসনের অভাব, দেশের টাকা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত অর্থনীতির সমৃদ্ধির দিকে আইনের শাসন এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আমাদের নব্বইয়ের যে আকাক্সক্ষা তা পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। সেটা অর্জন করতে হলে গণতান্ত্রিক দল, নেতা-কর্মীদের সোচ্চার থাকতে হবে। মানুষের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক মানবাধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর