রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জনগণের ক্ষমতায়নের সংগ্রামে নতুনভাবে সংগঠিত হোন

-ফয়জুল হাকিম লালা

জনগণের ক্ষমতায়নের সংগ্রামে নতুনভাবে সংগঠিত হোন

নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফয়জুল হাকিম লালা বলেছেন, যে প্রত্যাশা পূরণে নব্বইয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম, তা যতটা এগিয়ে ছিল, বর্তমানে তা পেছনে গেছে। এখন চরম সংকট চলছে। জনগণের হাতে ক্ষমতায়নের সংগ্রাম নতুনভাবে দেশবাসীকে সংগঠিত হতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের  সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান শাসকরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন, সে সাহস তাদের নেই। তারা জনগণকে ভয় পায়। পরিস্থিতি যে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, জনগণের আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলনের লক্ষ্য শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম হয়েছে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু আইয়ুব আমাদের ক্ষমতা দেয়নি। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ করা। কিন্তু তা হয়নি। দেশীয় ও বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই থেকে শুরু হলো সামরিক জান্তার শাসন আমল। জিয়াউর রহমানের সরকার ছিল সামরিক জান্তার শাসন। সেনাতন্ত্রের হাতে ছিল সব ক্ষমতা। তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। তাকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করলেন। এই ক্ষমতা গ্রহণ ছাত্র সমাজ মেনে নিতে পারেনি। এরশাদ ক্ষমতায় এসে বললেন, একুশে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া অনইসলামিক। লালা বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক অনৈক্যও ছিল। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির জোট নিয়ে বিরোধিতাও ছিল। পরবর্তীতে ঐক্য হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে সভা-সমাবেশ, মত প্রকাশের অধিকার, অবাধ তথ্য প্রবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। নারী, কৃষক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মী ও আইনজীবীদের দাবি বাস্তবায়ন হবে। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জামায়াত এরশাদকে জায়েজ করতে চেয়েছিল। ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি বলেন, নব্বইয়ের পর সব ছাত্রনেতাদের আমি বলেছিলাম, যে দশ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন করেছিলাম, সেটা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০ জায়গায় সভা সমাবেশ করব এই দশ দফা বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু ততদিনে আমাদের সহকর্মীরা কেউ কেউ নিজ দলের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমরা যে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপে আবার দেখা দেয় ২০০৭ সালে। সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার ক্ষমতা নিল। তারা জনগণকে জিম্মি করল। ফখরুদ্দীন, মইনউদ্দিন প্রথম দিকে জনগণের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের মুখোশ যখন উন্মোচন হলো তখন আবার আন্দোলন শুরু হলো। পরবর্তীতে জনগণের সম্মতিতে সরকার গঠন হলো না। ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন দাসের ভূমিকায় গেল। তারা নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করল। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচন হলো। জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলো।

সর্বশেষ খবর