রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোটের উত্তাপ গ্রামে

চায়ের টেবিল থেকে হাটবাজার আলোচনায় পৌর ও ইউপি নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

ভোটের উত্তাপ গ্রামে

শীতের আমেজে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জে। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ভোট হবে ২৫ পৌরসভায়। এরপর আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি ৬১ পৌরসভায়। এ ছাড়া জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শতাধিক পৌরসভায় আরও দুই ধাপের ভোটের প্রস্তুতি চলছে। আবার মার্চে শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনও। সব মিলে ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে জমে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি। দলীয় কার্যালয়গুলো নেতা-কর্মীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে। ভোটের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত প্রার্থী, নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে ইউপি নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরাও প্রচারণা শুরু করেছেন। গ্রামে গ্রামে তারা উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, কর্মিসভা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজারে এখন শুধুই ভোটের আলোচনা। কারা হচ্ছেন প্রার্থী? দলীয় মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন? সম্ভাব্য প্রার্থীর কে কেমন? সে আলোচনাও ঠাঁই পাচ্ছে চায়ের টেবিলে। শুভেচ্ছার পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রামগঞ্জ-হাট-বাজার। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কের দুই পাশে লাগানো হয়েছে ব্যানার-বিলবোর্ড। আসন্ন বিভিন্ন নির্বাচনে যারা দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী তারা বড় বড় নেতার বাসাবাড়িতে ভিড় করছেন। দলীয় কার্যালয়ে আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার ভোট হবে ২৮ ডিসেম্বর। আরও তিনটি ধাপে ১৬৯ পৌরসভায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট ১৬ জানুয়ারি; তৃতীয় ধাপের জানুয়ারির শেষের দিকে। আর চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। সচিব জানান, প্রতিটি ধাপে ইভিএমে ভোট হবে ৩০টির মতো পৌরসভায়। বাকিগুলোয় ব্যালটে। শীতকাল হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সময়মতো সব নির্বাচন হবে। এদিকে প্রথম ধাপের ২৫ পৌরসভায় প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। ২৫ পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৩৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাছাইয়ে বাদ পড়েন ৬১ জন। এখন মোট প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ২৭২ জন। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর ভোট হবে ইভিএমে। ১ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। ৩ ডিসেম্বর বাছাই শেষ হয়েছে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে প্রথম ধাপের পৌরসভাগুলোয় মেয়র পদে ১১২, সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর পদে ২৮৩ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এখন মেয়র পদে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ১০৩ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৭৮ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৩৮ জন।

দেশে মোট পৌরসভা ৩২৯টি। এবারে চার ধাপে ১৯৪ পৌরসভায় ভোট হবে। গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫ পৌরসভায় ভোটের তফসিল দেওয়া হয়। ২ ডিসেম্বর তফসিল হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভা নির্বাচনের। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ৩৬ দিন সময় দিয়ে ভোটের তারিখ দেওয়া হয় ৩০ ডিসেম্বর। এক দিনে ভোট হয় ২৩৪ পৌরসভায়। বাকিগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বিবেচনায় ও বিভিন্ন জটিলতা সেরে ভোট হয়।

মার্চে ইউপিতে ভোট শুরু : ২০১৬ সালে মোট ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট করে কমিশন। প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হয় ২২ মার্চ। ৩১ মার্চ ৭১০, ২৩ এপ্রিল ৭১১, ৭ মে ৭২৮, ২৮ মে ৭১৪ ও ৪ জুন ৬৬০ ইউপিতে ভোট হয়। তবে এবারে ইউপি সংখ্যা কিছু বেড়েছে। ইসি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। তবে ২০০ ইউপিতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে। এ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় কিছু ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ায় ৪ হাজার ১০০ ইউপিতে ধাপে ধাপে ভোট করতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল দেওয়া শুরু হবে। নির্বাচন চলবে বছরজুড়ে। জানা গেছে, গতবারের মতো আসন্ন ইউপির ভোটও হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান বা মেম্বার প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর