সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দূষণ কমাতে মধ্যরাতে শহরে পানি ছিটাতে হবে

-স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দূষণ কমাতে মধ্যরাতে শহরে পানি ছিটাতে হবে

করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথম পর্যায়ে রাস্তায় ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশের জলকামানগুলোকে পানি ছিটাতে দেখা যায়। বায়ুদূষণ কমাতে সংশ্লিষ্টরা যদি সেই জলকামানগুলো দিয়ে পানি ছিটানো শুরু করে তাহলে দূষণ অর্ধেকই কমে যাবে। মূলত আবহাওয়া শুষ্ক হওয়া এবং ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণ বেশি হচ্ছে। আবার ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে কারখানা আছে  সেখান থেকেও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে যদি এখন খোঁজ নিই তাহলে দেখতে পাব বিক্রেতা সারা বছর যতগুলো ইনহেলার বিক্রি করেছেন এর চেয়ে বেশি বিক্রি করেছেন গত কয়েক দিনে। বিশেষ করে শিশুদের অনেকেই এখন ইনহেলার ব্যবহার করছে।’ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, শীতে যেহেতু শুষ্ক মৌসুম এ জন্য মধ্যরাত থেকেই ফায়ার ব্রিগেড দিয়ে পানি দিতে হবে। এতে গাছের পাতা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফটোসিনথেসিস হবে। ফলে গাছগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে। এখনো ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে রান্নার কাজে খড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার চারপাশে অজস্র ইটভাটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বুলডোজার দিয়ে নদীর পাড়ঘেঁষা এসব ইটভাটা ধ্বংস করে দিলেই হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকার চারপাশে কেন ইটভাটা থাকা লাগবে! আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের যে কোনো স্থানের তুলনায় ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর এই যানবাহনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। আবার সরকারি গাড়িগুলোতেও ধোঁয়ার পরিমাণ বেশি। এগুলো যথাযথভাবে মেরামত করা হয় না। একইভাবে বিআরটিসির গাড়িতেও প্রচুর ধোঁয়া হয়। এই ধোঁয়া ভারী হয়। আর এগুলো সরাসরি রাস্তার পাশের গাছ ও মানুষজনের ওপর গিয়ে পড়ে। এই ধোঁয়া সহজে আকাশে উড়ে যায় না তাই শীতকালে এগুলো বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিচের দিকে থাকে। কলকাতায় এখন গিয়ে দেখা যাবে প্রতি এলাকায় ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির মতো গাড়ি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশপাশে রাস্তা ভেজা রাখাসহ গাছে পানি দেওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা। একইভাবে ঢাকায় রাতের বেলা এই পানি ছিটানো হলে অর্ধেক দূষণ কমে যাবে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের ফলেও ধুলার পরিমাণ বাড়ছে। আর শীতকালে এসব অবকাঠামো নির্মাণকাজে সৃষ্ট ধুলার পরিমাণও বেশি। অথচ সিঙ্গাপুরেও বড় বড় কাজ হচ্ছে কিন্তু সেখানে অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য এত ধুলা তৈরি হচ্ছে না। কারণ নির্মাণসামগ্রীর ওপর তারা নিয়মিত পানি ছিটায়। আবার শীতকালে বায়ুদূষণ হলেও বর্ষাকালে হয় না। শীতে গাছপালা কার্বন মনোঅক্সাইড শুষে নেয়। আমরা যে বিষগুলো বের করি তা গাছ গ্রহণ করে। যখন গাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হয় তখন রাস্তার দুপাশের গাছগুলো আঠালো হয়ে যায়। আর এর ওপর যখন ধুলা ওড়ে তখন তা আঠালো পাতায় আটকে যায়। এই গাছ আর অক্সিজেন দিতে পারে না। কার্বন মনোঅক্সাইড টেনে নিতে পারে না। এ জন্য দূষণ কমাতে শীতকালকে আমাদের আর্টিফিশিয়ালি বর্ষাকালে পরিণত করতে হবে। রাত ৩টায় ফায়ার সার্ভিসের কয়েক শ গাড়ি নামিয়ে আকাশের দিকে আর্টিফিশিয়াল বৃষ্টি নামালে পরিবেশ পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর