সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

১৩ বছর পড়ে আছে দুই সি-অ্যাম্বুলেন্স কোনো কাজেই লাগল না

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

১৩ বছর পড়ে আছে দুই সি-অ্যাম্বুলেন্স কোনো কাজেই লাগল না

অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সি-অ্যাম্বুলেন্স -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার গুরুতর অসুস্থ রোগী পরিবহনে দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই দুটি অ্যাম্বুলেন্স অসুস্থ রোগী পরিবহন করেনি। বরং অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে সি-অ্যাম্বুলেন্স দুটি এখন নষ্ট হওয়ার পথে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অতীতের মতো চরম দুর্ভোগ-ভোগান্তি মাড়িয়েই চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে আসতে হয়। দ্বীপ উজেলার এই জনপদের চার লাখ বাসিন্দার দুর্ভোগ কমেনি এতটুকু। এ উপজেলায় বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবায় আছে ৬১ শয্যার তিনটি হাসপাতাল, তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। জানা যায়, ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ৩২ লাখ টাকার একটি এবং ২০১৫ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপজেলা প্রশাসনকে ৬৫ লাখ টাকায় একটি সি-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে। কিন্তু একটি সি-অ্যাম্বুলেন্সও রোগী পরিবহনে সাগরে নামেনি। এ দুটির জন্য বরাদ্দ ছিল না চালক, জ্বালানি। উপযুক্ত ছিল না সাগরে চলার। এর মধ্যে একটি সি-অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ বছর ধরে গুপ্তছড়া ঘাট-সংলগ্ন ডাঙায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্যটি পড়ে আছে সন্দ্বীপের হারা মিয়ার ২০ শয্যা হাসপাতালের চত্বরে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সন্দ্বীপের অসুস্থ রোগীদের পরিবহনে দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু লজিস্টিক সাপোর্টসহ নানা সমস্যায় দুটির একটি সি-অ্যাম্বুলেন্সও রোগী পরিবহনে নামানো যায়নি। ফলে এগুলো থেকে কোনো সেবা পাচ্ছে না দ্বীপের মানুষ।’

সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিম বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স দুটির চালক নেই, নেই জ্বালানি বরাদ্দ। এ ছাড়া উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ফিটনেসও নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সমাধান হয়নি। তাই গুরুতর অসুস্থ রোগীকে এখন চিকিৎসার জন্য ১৪ নটিক্যাল মাইল সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে নিতে হয় ট্রলারে কিংবা স্পিডবোটে করে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে তখন তাও অসম্ভব হয়ে ওঠে।’ জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট দৈর্ঘ্যরে সি-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয়। এর পর থেকেই এটি পড়ে আছে গুপ্তছড়া ঘাট-সংলগ্ন ডাঙায়। এটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। আছে নির্মাণ ত্রুটিও। পাটাতনে লাল রং ও বডিতে সাদা রঙের প্রলেপ থাকা অ্যাম্বুলেন্সের এক পাশে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ সিল দেখা যাচ্ছে এখনো। ‘রেসকিউ ঈগল’ নামের এই সি-অ্যাম্বুলেন্সটিতে রোগী নেওয়ার স্ট্রেচার সোজা করে রাখার ব্যবস্থাও নেই।  ওজনেও অত্যন্ত হালকা। যে ইঞ্জিন দিয়ে এ ধরনের সি-অ্যাম্বুলেন্স চলার কথা, দেওয়া হয়নি সেটিও। তাই কেনার পর থেকেই এটি ডাঙায় আছে। অপর সি-অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে সন্দ্বীপের হারা মিয়ার ২০ শয্যা হাসপাতালের চত্বরে। এটিরও অভিন্ন অবস্থা। তবে স্থানীয়ভাবে টাকা সংগ্রহ করে এটি চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নির্মাণত্রুটি আছে সি-অ্যাম্বুলেন্সটির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্সের একটিরও নেই উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ফিটনেস। হাওর অঞ্চলে চলার উপযোগী সি-অ্যাম্বুলেন্স কিনে তা উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে সন্দ্বীপ পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্সের কোনোটির জন্যই নিয়োগ দেওয়া হয়নি চালক, বরাদ্দ দেওয়া হয়নি জ্বালানি। করোনার নমুনা নিতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সবাইকে।  প্রতিদিন উপজেলা থেকে নমুনা পাঠানোর কথা থাকলেও যাতায়াত সমস্যার কারণে এখন সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে নমুনা পাঠাতে হচ্ছে কয়েক দিন পর পর। এতে নমুনার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে এখন চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য নিতে হয় ট্রলারে কিংবা স্পিডবোটে করে।

সর্বশেষ খবর