বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

৩৩ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের রিট

নিজামুল হক বিপুল

শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সবকিছুতে খবরদারির বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেছে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সভাপতি দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু, অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, সেলিম আহম্মেদ ও রাশেদা আখতার বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাসহ বেশ কিছু বিষয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার উচ্চ আদালতে রিট দাখিল করেছেন। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, আইন সচিবসহ ১৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটি দাখিল করা হলেও এখন পর্যন্ত আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি। রিটের পক্ষে লড়ছেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। উপজেলা পরিষদ আইনের তৃতীয় তফসিলে উল্লিখিত উপজেলা পর্যায়ে হস্তান্তরিত সরকারের ১৭টি বিভাগের কাজ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে সম্পাদনের বিষয়ে আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। রিটে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের নির্দেশনার আলোকে নির্বাচিত প্রশাসনিক স্তর উপজেলা পরিষদের পরিবর্তে সংবিধান ও আইনকে উপেক্ষা করে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কর্তৃক উপজেলা প্রশাসন নামে অনুষ্ঠান করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- এ বিষয়ে আদেশ চাওয়া হয়েছে। হস্তান্তরিত ১৭ বিভাগের কর্ম সম্পাদনে উপজেলা পরিষদ আইনকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে প্রতিটি কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং একই কমিটিতে আইন অমান্য করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। অথচ উপজেলা পরিষদ আইনের ২৫ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবেন শুধু সংসদ সদস্যরা; উপজেলা চেয়ারম্যান নন। একই সঙ্গে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবেও ইউএনওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে কোনো জবাবদিহি নেই। এগুলো কেন অবৈধ হবে না- এ বিষয়ে আদেশ চাওয়া হয়েছে রিটে। একই সঙ্গে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের নিয়ে গঠিত ১৭টি কমিটি কেন কার্যকর করা হবে না- সে সম্পর্কেও আদেশ চাওয়া হয়েছে।

রিটে আইনের ৩৩ ধারাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আইনের ৩৩ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ ৩৩-এর ২ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।’

উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার বলেন, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (সংশোধিত ২০১১) অনুযায়ী উপজেলায় থাকা ১৭টি দফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের কাজ উপজেলায় হস্তান্তরিত। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন পরিপত্রের মাধ্যমে ওই ১৭টি বিভাগের যেসব কমিটি করা হয়েছে এর সব কটিতেই সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তা। আর উপদেষ্টা করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানকে। একইভাবে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হচ্ছেন ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। অথচ একই প্রজ্ঞাপনে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আয়ন-ব্যয়ন কমিটির সভাপতি হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র।

প্রসঙ্গত, সারা দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন ১ হাজার ৪৭৬ জন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্বাচিত এ জনপ্রতিনিধিরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কোনো দায়িত্বই যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, উল্টো সব ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছেন।

সর্বশেষ খবর