মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ করেছে জাতি। গতকাল ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল নিয়ে উপস্থিত হন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা ১৯৭১ সালে দেশের জন্মলগ্নে শহীদ হওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ সময় ’৭১-এ পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিরা এখন ‘নব্য রাজাকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানছে মন্তব্য করে তাদের রুখে দেওয়ার ডাক দেওয়া হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা এবং কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুর নিয়ে যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে, সেই সময়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধের প্রত্যয় উচ্চারিত হয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কণ্ঠে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি ছিল। ছিল শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শোকযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি। মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ভোরের আলো ফোটার আগেই মানুষের ঢল নামে। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির মেধাবী সন্তানদের স্মরণ করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর প্রায় ৩০ বছর ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া’ মৌলবাদের মূলোৎপাটন কঠিন হলেও জাতি সে লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করেছেন।

মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মিরপুর স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই পুষ্পমাল্য নিয়ে একে একে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হাজির হতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে অনেক বাবা-মাও চলে আসেন সেখানে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গান, কবিতা ও বক্তৃতামালায় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেন তারা। বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর নেতা-কর্মী ও শিল্পীরা।

সর্বশেষ খবর