শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা

চীন থেকে কিনছে ব্রাজিল, ফের উহানে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

প্রতিদিন ডেস্ক

ভ্যাকসিন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ফাইজারের পর মডার্নার ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই দুই ভ্যাকসিন গরিব দেশগুলোর জন্য সরবরাহের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। রাশিয়া ও চীনও বিভিন্ন দেশে তাদের ভ্যাকসিন বিক্রি নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ব্রাজিলের একটি রাজ্যের গভর্নর বলেছেন, তাঁর দেশ চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি ভ্যাকসিন ‘করোনাভ্যাকের’ ৪ কোটি ৬০ লাখ ডোজ কিনবে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছিল, ভ্যাকসিন নিয়ে নিষ্ক্রিয়তায় তোপের মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। ভ্যাকসিন কিনতে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় তাঁর ব্যাপারে জনমনে  ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমালোচকরাও বলেন, দেশটিতে করোনায় মৃত্যু যখন আবার বাড়তে শুরু করেছে, তখন সুসংহত ভ্যাকসিন কর্মসূচি গ্রহণে তাঁর ব্যর্থতা ‘আত্মহত্যামূলক অবহেলা’র শামিল। গত অক্টোবরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পাজুয়েল্লো বলেছিলেন, সরকার চীনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার পরিকল্পনা করেছে। তবে তাঁর এ বক্তব্যের অল্প পরই প্রেসিডেন্ট বলসোনারো বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভুল করেছেন। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পিয়াউই রাজ্যের গভর্নর ওয়েলিংটন ডায়াস বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডওয়ার্ড পাজুয়েল্লো তাঁকে জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকার অন্যান্য দেশের পাশাপাশি চীন থেকেও করোনার ভ্যাকসিন কেনার পরিকল্পনা করেছে। তিনি সাংবাদিকদের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও সরবরাহ-সংক্রান্ত চুক্তির একটি কপি এক বৈঠকে দেখার কথা জানান। এই ভ্যাকসিনের ৯০ লাখ ডোজ আগামী ২৫ জানুয়ারি হাতে পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট বুটানটান এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়ে ওই ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলে করোনায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তবে বলসোনারো করোনার ভয়াবহতাকে বরাবরই খাটো করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর ভাষায়, করোনা মহামারী ‘একটি ছোটখাটো ফ্লু’। গভর্নরের নতুন বক্তব্য দেওয়ার আগে সমালোচকরা বলছিলেন, ব্রাজিলে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা থাকলেও ভ্যাকসিন নিয়ে নিজের অবস্থান বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না সরকার। ২১ কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে টিকার বিষয়ে সরকার তার সব মনোযোগ অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছে। আবার বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল এখনো ফাইজারের ভ্যাকসিন পেতে চুক্তি করেনি। চীনের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন করোনাভ্যাকের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলসোনারো সরকার। অনেকেরই তাই সন্দেহ, তাঁর এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সমালোচকরা আরও বলেছিলেন, ব্রাজিলের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বলসোনারোর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সাওপাওলোর ডানপন্থি গভর্নর জোয়াও ডোরিয়া চীনা ভ্যাকসিন কিনতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ডোরিয়াকে কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ না দিতেই চীনের ভ্যাকসিনের প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছেন বলসোনারো।

তদন্তে উহান যাচ্ছেন ডব্লিউএইচওর বিজ্ঞানীরা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, আগামী মাসে কভিড-১৯ এর উৎস সন্ধানে চীনের উহান শহরে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। সূত্র : রয়টার্স। ভাইরাসটির আবির্ভাব নিয়ে পৃথক তদন্তে অনীহা ছিল বেইজিংয়ের, সে কারণে শহরটিতে প্রবেশাধিকার পেতে ডব্লিউএইচওকে বেশ কয়েক মাস দরকষাকষি করতে হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস উহানের একটি বণ্যপ্রাণীর বাজার থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হলেও এর উৎস নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের উত্তেজনা বাড়তে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব গোপন করার চেষ্টারও অভিযোগ এনেছে। উহানে ডব্লিউএইচওর পাঠানো ১০ বিজ্ঞানী মূলত ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উপায় খুঁজতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্য একজন জীববিজ্ঞানী। এ বিষয়ে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ফাবিয়ান লিনডার্টজ বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে, দায়ী দেশ খুঁজে বের করার জন্য নয়, কী ঘটেছিল তা বোঝার চেষ্টা করতে দলটি সেখানে যাচ্ছে। যদি কিছু তথ্য পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আমরা ঝুঁকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারব।’ ভাইরাসটি কখন ছড়ানো শুরু হয়েছিল এবং উহান থেকেই এর উৎপত্তি কিনা- তা খুঁজে বের করাও তদন্তের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। উহানে এই তদন্ত দলের কার্যক্রম চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের মতো স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছেন লিনডার্টজ।

সর্বশেষ খবর