শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পৌষের শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১০.৫

প্রতিদিন ডেস্ক

পৌষের শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত

পৌষের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রাজারহাটে ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসসহ রংপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।

এ সময় রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬.৯ ডিগ্রি  সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ডে ২৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৮ নভেম্বর তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অফিস বলছে, শীত জেঁকে বসছে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরও ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উত্তরে কোথাও কোথাও মৃদু  শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, যা চলতে পারে কয়েকদিন। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে দুই-তিন দিন পর। ডিসেম্বরে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠানো আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

পঞ্চগড় : ঘন কুয়াশা ও উত্তরে হাওয়ায় পঞ্চগড়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এখন দিনের বেলায় দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পথঘাট। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের উত্তাপ মিললেও বিকাল গড়াতেই তা আর থাকে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। কমে আসে তাপমাত্রাও। আর মাঝরাতে অনুভূত হয় হাড় কাঁপানো শীত। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো।

রাজশাহী : রাজশাহীতে গেল কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে শীতের তিব্রতা। ওঠানামা করছে তাপমাত্রা। শৈত্যপ্রবাহ এখনো শুরু না হলেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কুয়াশা কেটে গেলে শীত আরও বাড়বে। গত মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১৫.২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার ১৩. ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাজশাহীতে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি।

ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে ফসলের মাঠেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়ের আশঙ্কা। চলতি রবি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের মাঠে রয়েছে আলু, গম, পান, ডাল, ভুট্টা, সবজি ও বোরোর বীজতলা। আলুর ফসলে লেট ব্লাইট ছড়িয়ে পড়ছে। আর বোরো খেতের বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, রাজশাহীতে সর্র্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এসেছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসা এবং সূর্যের দেখা না পাওয়ার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর তাপমাত্রা আরও কমবে। তখন শুরু হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।

গাইবান্ধা : কয়েকদিন থেকে গাইবান্ধায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। চার দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ফলে বেলা ১০টা পর্যন্ত অন্ধকার হয়ে থাকায় যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এদিকে শহরের দোকান ও বিপণিবিতানে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে গেছে। আবার স্বাধীনতা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের ফুটপাথে পুরাতন গরম কাপড় কিনতে নিম্নবিত্তদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতারা বলছেন শীত বাড়ার সুযোগে দোকানিরা গরম কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের মানুষ শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গরিব মানুষ শীতের কাপড়ের সংকটে কষ্ট ভোগ করছেন কিন্তু সরকারি কোনো কম্বল বা গরম কাপড়ের সহায়তা এখনো পাওয়া যায়নি। জেলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে এখনো কেউ ভর্তি হননি বলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন।

লালমনিরহাট : শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবীসহ তিস্তা-ধরলা পাড়ের ৬৩ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। প্রচন্ড শীতের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় হাজার হাজার ক্ষেতমজুর পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। শীতের দাপটে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা অঞ্চল। হিমালয়ের চারদিক দিয়ে অক্টোপাসের মতো ধেয়ে আসছে শীতের সাঁড়াশি আক্রমণ। পারদ নিম্নমুখী হওয়ায় রীতিমতো শৈত্যপ্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলছে, আর থরথরে কাঁপছে জেলার মানুষজন। বিশেষ করে শিশুসহ বয়স্কদের দুরবস্থা চোখে পড়ার মতো।

তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর চর এলাকায় দেখা গেছে, আগুনের কুন্ডলি জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে অসহায় পরিবারগুলো। শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে অসহায় জনগোষ্ঠী। বেশি বিপাকে পড়েছে সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো।

এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু কুমার রায় জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৭ জন ভর্তি হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর