মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আলোচনায় অটো পাস বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আকতারুজ্জামান

আলোচনায় অটো পাস বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

৯ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে অনেকটাই স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে অটো পাস দিয়েছে সরকার। এতে অটো পাস দেখল দেশ। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্তও পরীক্ষা ছাড়া দেওয়া হয়েছে অটো প্রমোশন। এসব বিষয় আলোচিত ও সমালোচিত ছিল শিক্ষা খাত। এ ছাড়া এবারই প্রথম সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১৯ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৬ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা         দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর দফায় দফায় বেড়েছে ছুটি। ছুটি চলছে এখনো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে পাঠদান চালু রেখেছে সরকার। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ও টেলিভিশনে পাঠদান চালু থাকলেও শিক্ষার্থীরা এ ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন এ ক্লাসে মনোযোগী নয়। বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে সরকার শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও তা তেমন একটা কাজে আসছে না বলে অভিযোগ শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও করোনার প্রকোপে বন্ধ থাকায় বৃহৎ এ শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশোনাই এখন বড় ভরসা। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চালু করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস। সেগুলোতেও আগ্রহ কমেছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাসের আয়োজন করা হলেও একাদশের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কোনো আয়োজনই রাখেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো কলেজ এই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করলেও সিংহভাগই এর বাইরে থেকে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর হোঁচট খেয়েছে সব পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী। গত কয়েক বছরে ১ জুলাই একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হলেও করোনার কারণে এবার বিলম্বে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ ছিল গত ১ এপ্রিল থেকে। করোনার কারণে বাতিল করা হয় এই পাবলিক পরীক্ষা। জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চলতি মাসেই এসব শিক্ষার্থীর ফল ঘোষণা করবে সরকার। করোনার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরই সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় শুরু হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়াও।

বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি থাকলেও এবারই প্রথম দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্যরা। এ ছাড়া আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবারের মতো এবারও গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভাবছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে।

কভিড-১৯ সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় পরীক্ষাও বন্ধ ছিল এত দিন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্তমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। এদিকে আবাসিক হল বন্ধ করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর