বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যবসায় ধস পুঁজি নেই ঋণও নেই

রুহুল আমিন রাসেল

ব্যবসায় ধস পুঁজি নেই ঋণও নেই

কেমন গেল ২০২০ সাল? ব্যবসায়ীরা এ প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শুরুটা ভালোই ছিল। মুজিববর্ষের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থান দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু মার্চে এসে করোনা মহামারীতে সবকিছু ল-ভ- হয়ে গেছে। লকডাউনে পথে বসে গেছেন ব্যবসায়ীরা। ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব অনেকে। এখন তাদের পুঁজি নেই, ঋণও নেই। সরকারি প্রণোদনার ঋণ শিগগিরই মিলছে না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। বড় ব্যবসায়ীরাও বিপদে আছেন। দুনিয়াজুড়ে এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, করোনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে দ্বিতীয় দফায় আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য হলো, করোনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৫০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। পণ্যের চাহিদাও কমেছে। শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে গেছে। ভেঙে পড়েছে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ীদের সহজে ঋণ প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, সারা দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প ও কল-কারখানাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে শিল্প খাত। এক কঠিন সংগ্রামে লড়ছে অর্থনীতি। ছাঁটাই ও বেকারত্ব মোকাবিলায় দেশীয় শিল্পে সুবিধা এবং  স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অর্থনীতি পুনর্বাসন, পুনর্গঠন, পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই শীতে করোনা মহামারীতে বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার দ্বিতীয় ধাপে শিল্প খাতভিত্তিক ও অঞ্চল প্রণোদনা প্রদানে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লকডাউনে ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ গেলেও এখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সাহসী প্রণোদনা প্যাকেজ এবং দিকনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এখন টিকে থাকার লড়াই করছেন। এই সময়ে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও হয়রানি মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিরুদ্ধে নতুন বছরে সরকারের অ্যাকশন দেখতে চান এই ব্যবসায়ী নেতা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বিদায়ী ২০২০ সাল কোনোভাবেই ভালো ছিল না দোকানদারের জন্য। মার্চের শুরুতে করোনা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিক্রি নেই বললেই চলে। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বৈশাখ, দুই ঈদ, পূজা এবং চলতি শীতে তেমন কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে ভারতীয় পণ্য বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তারা ভারতে যাতায়াত করতে না পেরে পণ্য আমদানিও করতে পারেননি। অধিকাংশ দোকানে পণ্য নেই। আগে যে পণ্য ছিল তা করোনাকালে যেটুকু বিক্রি করতে পেরেছেন, এর পুরোটাই খেয়ে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র দোকানদাররা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, করোনাকালে সরকার-ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো আত্মীয়স্বজনের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে পুরনো উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। নতুনরা ব্যাংকগুলো থেকে কোনো সহযোগিতা বা সহায়তা পাচ্ছেন না। আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াতে কয়েক বছর সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত সহায়তা লাগবে। মনে রাখতে হবে, করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেই অর্থনীতি আগের অবস্থায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর