বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অগ্রণী ব্যাংকের সুদিন ফিরিয়েছেন ড. জায়েদ বখ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

অগ্রণী ব্যাংকের সুদিন ফিরিয়েছেন ড. জায়েদ বখ্ত

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুর্বলতা, খেলাপি ঋণ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। তবে প্রচলিত সেই ধারণার পরিবর্তন ঘটিয়ে অগ্রণী ব্যাংককে সুদিনে ফিরিয়ে এনেছেন অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখ্ত। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির বিনিয়োগ, খেলাপি ঋণ, অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেন তিনি। নিজের কাজে সফলতার জন্য সরকার অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে টানা তৃতীয়বার নিয়োগ পেলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখ্ত। গত ৭ ডিসেম্বর সরকার তাঁকে আবার তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান  বিশ্বব্যাংক, আইএলও, এডিবি, এসক্যাপ, ইইউ, এফএও, আংকটাড এবং জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনে কাজ করা এই অর্থনীতিবিদ পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন দেশের ব্যাংকিং খাতে।

ড. জায়েদ বখ্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে নানামুখী গবেষণা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য, শিল্প, বেসরকারি খাত, এসএমই উন্নয়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বাহ্যিক অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর গবেষণা ও অভিজ্ঞতা ব্যাপক। এ ছাড়া শিল্পনীতি, জাতীয় আয় হিসাব, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সরকারি ব্যয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের পলিসি তৈরিতে তিনি অভিজ্ঞ। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে ম্যানুফেকচারিং খাত, আইসিটি শিল্প, গ্রামীণ অর্থনীতি ও দারিদ্র্য নিরসন, নিটওয়্যার শিল্প, কৃষি, পরিবেশ মানদন্ড ও রপ্তানি, বাংলাদেশের যন্ত্রাংশ শিল্প, অর্থনৈতিক সংস্কার, সরকারি শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি, এসএমই খাত, গ্রামীণ উন্নয়নে প্রযুক্তি, বাংলাদেশের তাঁত শিল্পসহ আরও অসংখ্য বিষয়। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব গবেষণার বিষয়কেই গুরুত্ব দেন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এসএমই, ইএসএমই সব কৃষি খাতের ওপরে বিনিয়োগে জোর দেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রেও তাঁর গবেষণা কাজের প্রভাব রয়েছে অনেক। সে কারণেই দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। ড. জায়েদ বখ্ত ১৯৭১ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) স্টাফ অর্থনীতিবিদ হিসেবে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে একই প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ ফেলো হিসেবে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৪ সাল থেকে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে গবেষণা পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের  চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম দায়িত্ব নেন। এর আগে ২০১২ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হন। এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগান তিনি অগ্রণী ব্যাংকের কর্ম পরিচালনায়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পুরো ঋণ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজান। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর ঘটাতে তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ব্যাংকটিকে দেশের প্রথম শতভাগ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করার পর ১৯৭০ সালে পাকিস্তান ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন ড. জায়েদ বখ্ত। ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে দ্বিতীয়বার অর্থনীতিতে এমএসসি এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে ইউনেসকো, আংকটাড, স্ট্র্যাথলাইড ইউনিভার্সিটি, এসক্যাপ ও আইএলওতে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ সালে শ্রীলঙ্কায় গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান নিয়ে আইএলওর সেক্টর রিভিউ মিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে এসক্যাপের কনসালট্যান্ট হিসেবে আসিয়ান ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকস, টোকিও, জাপানসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা পরিচালনা করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দায়িত্বের আগে ২০০২ সালে ছিলেন সরকারি ব্যয় রিভিউ কমিশনের সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ছিলেন। আর ১৯৯৮ সালে শিল্পনীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন এ অর্থনীতিবিদ।

সর্বশেষ খবর