শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাকিস্তান ও জাপানে করোনার প্রকোপ ফের বেড়েছে

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ফের পাকিস্তান ও জাপানে ভাইরাসটির প্রকোপ বেড়েছে। সূত্র : ডন, রয়টার্স।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে পাকিস্তানে। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার  দেশটিতে করোনায় এক দিনে রেকর্ড ১১১ জন মারা  গেছেন। এই সংখ্যা কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ন্যাশনাল কমান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে শুধু বৃহস্পতিবার করোনায় মারা গেছেন ১১১ জন। আর  সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ২৫৬ জন। গত ১৫ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই মহামারীর দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরুর পর ১৫ ডিসেম্বর মারা যান ১০৫ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যাও ছাড়িয়ে যায়।

পাকিস্তানের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) বলেছে, যুক্তরাজ্য করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণের বিষয়ে পাকিস্তান সতর্ক। তবে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়সাল সুলতান স্বীকার করেন, পাকিস্তানের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান অবস্থা এক হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশের পরিস্থিতি খারাপ। এনএইচএস এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানে করোনা পরিস্থিতি নজরে রাখা হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা সব বিমানযাত্রীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত ও তা মোকাবিলা করার বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথকে (এনআইএইচ) সতর্ক রাখা হয়েছে।

জাপানে শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়ছে : করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জাপান। ডিসেম্বরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এখানে। সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে জাপানে। শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সরকার যেন হাত গুটিয়ে বসে আছে। কবে টিকা আসবে এবং টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কে কখন পাবেন, তা ঠিক করার বাইরে বলিষ্ঠ আর কোনো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে দেখা যাচ্ছে না।

গত বুধবার জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে এক দিনে ৩ হাজার ২৭১ জনের করোনা শনাক্তের খবর দিয়েছিল। পরদিন সেখানে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৫৬ জন। করোনায় জাপানে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল এটাই। বৃহস্পতিবার আবার সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে। এদিন করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৩ জনের। রাজধানী টোকিওতে এক দিনে ৮৮৮ জনের করোনা শনাক্তের খবর পেয়েছে নগর প্রশাসন, যা টোকিওতে এক দিনের সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের রেকর্ড। তাদের মধ্যে ৭৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও নতুন করে লকডাউন কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণার চিন্তা করছে না জাপান সরকার। প্রথম জরুরি অবস্থার বিরূপ অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা এখনো কাটেনি। ফলে সেই পথে এখন আর জাপান সরকার হাঁটতে চাইছে না। তবে কিছু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সীমিত আকারে আবারও আরোপ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা সাংবাদিকদের বলেছেন, খেলাধুলার বড় আয়োজনের জায়গাগুলোতে দর্শক গ্রহণের সর্বোচ্চ অনুমোদিত সংখ্যা ১০ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজারে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। এ নির্দেশনা ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে আসন্ন নববর্ষ ও বছর শেষের ছুটিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন। ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও উপদেশ দিয়েছেন তিনি। ছুটির সময়ে বাড়িতেও মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করেছেন কোইকে। টোকিওর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলাতেও একই উপদেশ দেওয়া হয়েছে। জাপান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা টিকা পাবেন, সে পরিকল্পনা ঠিক করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম দল হিসেবে টিকা নিতে পারবেন। এর পরের তালিকায় আছেন বয়স্ক লোকজন। ২০২১ সালের মার্চে যাদের বয়স ৬৫ বছর কিংবা বেশি হবে, তালিকায় তারা সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। মার্চের শেষ দিকে তাদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। এরপর আছেন স্বাস্থ্য সমস্যায় যারা ভুগছেন, সে রকম লোকজন। ফলে প্রথম দফার টিকাদান কর্মসূচি শেষ হতে বেশ কয়েক মাস লেগে যাবে। জাপান সরকার অবশ্য চাইছে, জুলাইয়ের শেষ দিকে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই জাপানে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে।

সর্বশেষ খবর