শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সীমান্ত হত্যা রোধে রাতে যৌথ টহল দেবে বিজিবি-বিএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে থাকা স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর যৌথ টহল কার্যকরে একমত প্রকাশ করেছেন দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানরা। এ ছাড়া দুই দেশের সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনসচেতনতামূলকসহ প্রয়োজনীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়েও উপনীত হন তারা। ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত রক্ষায় এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল সীমান্ত সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য উঠে আসে।

২২ ডিসেম্বর এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গৌহাটির এ সম্মেলনে অংশ নেয়। অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয় সম্মেলনে। ডিজি পর্যায়ে আলোচনা শেষে সীমান্ত সম্মেলন হয়। আজ বিজিবি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক, দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত, মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সব সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্কের প্রশংসা করে। তারা প্রত্যাশা করে বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যা না কে হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

সীমান্তে হত্যা কমিয়ে আনার আশ্বাস দেন বিএসএফ মহাপরিচালক। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একমত হয়।

এদিকে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ আস্তানাগুলো ধ্বংসের জন্য অনুরোধ করেন বিএসএফ মহাপরিচালককে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ যেমন মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জাল মুদ্রা, সোনা প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে দুই দেশের যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে যা উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক। একে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে। চোরাকারবারিদের সম্পর্কিত এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে- এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। তখন উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম, সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারেও আশ্বাস দেওয়া হয়।

গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে (ভার্চুয়ালি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নিরীহ পথের অনুরোধ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি অনুসরণের জন্য অনুরোধ করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।

উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখা ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপে সম্মত হয় বিজিবি-বিএসএফ। দুই দেশের বাহিনী উভয়কে আগে থেকে অবগত করা ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি দেয়।

বিজিবি ও বিএসএফ উভয় মহাপরিচালক সম্মেলনের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উভয়েই সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আগামী এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষণ করে।

সর্বশেষ খবর