রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় পরিবহন সংকট চলছেই

শামীম আহমেদ

ঢাকায় পরিবহন সংকট চলছেই

করোনা মহামারীতে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে ঢাকা ছাড়লেও রাজধানীর গণপরিবহন সংকট কাটেনি। এখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে নাভিশ্বাস উঠছে কর্মজীবী রাজধানীবাসীর। দুপুরের দিকে বাসগুলোয় তুলনামূলক কম যাত্রী দেখা গেলেও সকাল ও সন্ধ্যায় বাসে উঠতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে গাদাগাদি করে, দুই-আড়াই ঘণ্টা ঝুলতে ঝুলতে পাড়ি দিতে হচ্ছে ১৫-১৬ কিলোমিটার পথ। পথেই নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি  ভোগান্তিতে পড়ছেন কর্মজীবী নারী ও বৃদ্ধরা। এদিকে বাস সংকট থাকলেও সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, যা দীর্ঘায়িত করছে ভোগান্তি।

রাজধানীর উত্তরার একটি বিউটি পারলারের কর্মী সেঁজুতি রেমা থাকেন নর্দা এলাকায়। কোনো দিন সকাল ৯টায়, কোনো দিন বেলা ৩টায় প্রবেশ করতে হয় কর্মস্থলে। যেদিন সকাল ৯টায় পারলারে যেতে হয় সেদিন বাসা থেকে বের হন দুই ঘণ্টা হাতে নিয়ে। ৩টায় ডিউটি থাকলে বের হন এক ঘণ্টা আগে। উপজাতি এই তরুণী বলেন, ‘সকাল ৮টায় বের হলে বাসে ওঠা যায় না। বাসে দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। তাই সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে পড়ি। ওই সময় রাস্তা ফাঁকা থাকায় ৩০-৪০ মিনিটে পারলারে পৌঁছে যাই। তবে তখনো পারলার না খোলায় আশপাশে ঘোরাঘুরি করি। সকালে যাওয়ার জন্য ভোর ৫টায় উঠে রান্না করি। দুপুরের পর যেদিন ডিউটি থাকে সেদিন সমস্যা হয় না। ওই সময় বাসে সিট পাওয়া যায়, যানজটও কম থাকে। ফেরার সময় কষ্ট বেশি হয়। বিকাল বা রাতে যখনই বের হই, বাসে ভিড় থাকে। বাধ্য হয়ে ভিড় ঠেলে উঠি।’ সেঁজুতির মতো রাজধানীর অসংখ্য কর্মজীবী নারীকে সংসার সামলানোর পরও বাসে জায়গা পেতে অতিরিক্ত এক-দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয় বাসা থেকে। কেউ আবার বাধ্য হয়ে ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গতকাল সকালে নর্দা বাস স্টপেজে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেছে গণপরিবহনের যাত্রীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির চিত্র। সকাল ৭টার দিকে বাসের কশ্বক্টররা বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে হাঁক ছাড়লেও ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে গাজীপুর-উত্তরা থেকে মতিঝিল-পল্টনমুখী কোনো বাসেই ছিল না দাঁড়ানোর জায়গা। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই প্রতিটা বাসের মধ্যে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যাত্রী। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারছিল না অসংখ্য যাত্রী। নর্দার বাসিন্দা ও গুলিস্তান মার্কেটের এক দোকানদার বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করলে বাসের জন্য দুপুর পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। দোকান খোলা হবে না। করোনার মধ্যে বাসে সিটের অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের কর্মী শাহেদ বলেন, সকাল ও সন্ধ্যার পর বাসের তুলনায় যাত্রী বেশি থাকে। নিষেধ করলেও যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে যায়। আমরা না নিলে তারা যাবে কীভাবে? তাই বেশি বাধা দিই না।

রাজধানীতে গণপরিবহন নৈরাজ্যে যানজট ও গণপরিবহন সংকটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। করোনার মধ্যে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়লেও সমস্যা দূর হয়নি। গণপরিবহন কম হওয়ায় মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন বিদেশ থেকে ৪ হাজার বাস এনে  সেগুলো সাতটি আলাদা কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বিষয়টি আর এগোয়নি। সূত্র জানায়, আনিসুল হক মৃত্যুর পর আগে ক্রয় করা নতুন কিছু বিআরসিটি বাস রাজধানীতে নামলেও তার চেয়ে বেশি বাস অচল হয়ে ওয়ার্কশপে ঢুকে গেছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাসের পর ফিটনেস না থাকা অনেক বেসরকারি গাড়ি রাস্তা থেকে উঠে গেছে। বর্তমানে নতুন রুট পারমিটও বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব ও এনা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, কোনো গাড়িই বসে নেই। অফিস টাইমে ভিড়ের সমস্যা আগেই ছিল। এ ছাড়া ঢাকায় গাড়ি চালানো তেমন লাভজনক না হওয়ায় কিছু কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কোম্পানি গাড়ি ঢাকার বাইরে নিয়ে গেছে। এতেও বাস কমেছে। এ ছাড়া এখন ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কমিটির নির্দেশে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) মিটিং বন্ধ রয়েছে। তাই নতুন রুট পারমিট বন্ধ আছে। এজন্য বাস এখনই বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। পুরনো গাড়িগুলো আর থাকবে না। ২২টি কোম্পানির আওতায় রাজধানীর সব গণপরিবহন চলে আসবে। তখন গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে। এরপর গাড়ি বাড়ানো দরকার কি না সেটা বিবেচনা করে দেখা হবে। সূত্র জানায়, আগামী বছরের ১ এপ্রিল রাজধানীর ঘাটারচর থেকে মতিঝিল রুটে বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে একটি রুটের আংশিক অংশে বাস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ক্রমান্বয়ে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে ৪২টি রুটে চলবে রাজধানীর সব বাস। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো গণপরিবহনকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। এতে রাজধানীর মধ্যে আন্তজেলা বাসের চাপ কমবে। রেশনালাইজেশন হলে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। এতে যানজট কমবে, বাসগুলো বেশি ট্রিপ দিতে পারবে। এতে যাত্রী ভোগান্তি কমবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর