সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

টানা তিন দিন নিম্নমুখী সংক্রমণ, জনমনে স্বস্তি বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

শামীম আহমেদ

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার তিন দিন ধরে টানা কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা বিগত ২৬০ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হারের তথ্য জানানো হয় ৩ আগস্ট। ওই দিন নমুনা পরীক্ষায় ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর সংক্রমণ কমতে শুরু করে নভেম্বরের মাঝামাঝি, শীত পড়তেই ফের বৃদ্ধি পায়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ    থেকে আবারও সংক্রমণ কমতে শুরু করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫২ দিন পর ১৫ ডিসেম্বর সংক্রমণ হার ফের ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে ওঠা-নামা করছিল সংক্রমণ। গত তিন দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে এই হার। ২৪ ডিসেম্বর সংক্রমণ হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরবর্তী তিন দিন ধারাবাহিকভাবে এই হার কমে হয় যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ও ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। টানা সংক্রমণ হার কমায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে অনেকেই আর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। হাটে-বাজারে, শপিং মলে, গণপরিবহনে সর্বত্র মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন মানুষ। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টিও তেমনভাবে মানা হচ্ছে না কোথাও। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা এখনো পরিস্থিতিকে নিরাপদ মনে করছেন না। যে কোনো সময় সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই কেবল তাকে নিরাপদ সংক্রমণ হার ধরা যায়। এ ব্যাপারে  রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টানা তিন দিন সংক্রমণ কমা অবশ্যই ভালো খবর। তবে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। শুধু ৫ শতাংশের নিচে নামলেই হবে না, পরপর চার সপ্তাহ এই হার বজায় থাকতে হবে। ভাইরাসের ঢেউ সাত-আটবারও হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ কমে গিয়ে আবারও বেড়েছে এবং আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাই ভাইরাসটি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধির বিকল্প নেই। এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৫টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ১ হাজার ৪৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৪৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৪৫২ জন। গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৭৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন পুরুষ ও  আটজন নারী। হাসপাতালে ২৩ জনের ও বাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, সাতজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, একজন চল্লিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ১৭ জন ঢাকা, তিনজন চট্টগ্রাম এবং দুজন করে খুলনা ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। মৃত ২৪ জনের মধ্যে ১০ জনের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, অ্যাজমা, ক্যান্সারসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ ছিল। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর