বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রথম ধাপের পৌর ভোট কেমন হলো

ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ, আওয়ামী লীগই ৬৪ শতাংশ । চাটমোহরে বিএনপি পেয়েছে ৮৫ ভোট, রাজশাহীতে ছিনতাই হওয়া ইভিএম উদ্ধার

গোলাম রাব্বানী

প্রথম ধাপের পৌর ভোট কেমন হলো

এবারের পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের ২৩ পৌরসভায় মেয়র পদে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ নির্বাচনে ছয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য পাঁচ দলের। সব মিলে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছে ৬৪ শতাংশ। আর বিএনপি সাড়ে ১৩ শতাংশ। বাকি ভোট পেয়েছে চার রাজনৈদিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ২৩ পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১৮টিতে, বিএনপি দুটিতে আর তিনটিতে (একটি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। ইসির তথ্যানুযায়ী এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মেয়র পদে ২৩ পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছিল। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল চারজন, ইসলামী আন্দোলনের নয়জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একজন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির একজন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে একযোগে দেশব্যাপী ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন হলেও এবারে চার ধাপে হচ্ছে। ওই নির্বাচনে ২০ দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন। ভোট পড়েছিল ৭৩ দশমিক

৯২ শতাংশ। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৩ পৌরসভার মধ্যে ১২টিতেই ধানের শীষের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও। এমনকি পাবনার চাটমোহরে বিএনপি পেয়েছে মাত্র ৮৫ ভোট। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। যেসব পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন সেগুলো হলো- পাবনার চাটমোহর, রংপুরের বদরগঞ্জ, বরগুনার বেতাগী, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, ঢাকার ধামরাই, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর, রাজশাহীর কাটাখালী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, মানিকগঞ্জ সদর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ভোট পেয়েছে ২৩৮, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ৪২২, নেত্রকোনার মদনে ১৫৬ আর সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ৩৫৭টি।

ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ : ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সোমবার ভোট হওয়া ২৪ পৌরসভার মধ্যে একটিতে মেয়র পদের ফলাফল প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ২৩ পৌরসভায় গড়ে ৬৫.০৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলে। ভোট শেষ হওয়ার আগেই খুলনার চালনা পৌরসভায় একজন মেয়র প্রার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই পৌরসভায় মেয়র পদের ফল স্থগিত করে ইসি। তবে বছরের শেষ সময়ে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে।’

মহামারীর মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের সে উত্তাপ ছিল না। বিএনপি কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল ‘প্রত্যাখ্যান’ করলেও নির্বাচন কমিশনের ভাষায় সোমবারের নির্বাচন ‘সাকসেসফুল’ হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ শাখার তথ্যানুযায়ী পটুয়াখালীর কুয়াটাকায় সর্বোচ্চ ৮৫.৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৪০.৮৭ শতাংশ, যা সারা দেশে সবচেয়ে কম। ২৩ পৌরসভায় ৬ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদে বৈধ ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৯টি। সোমবার ভোট শেষে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচন সার্বিকভাবে খুব ভালো হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল ভালো। সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।

রাজশাহীতে ছিনতাই হওয়া ইভিএম উদ্ধার, মামলা : রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভায় ইভিএম ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানায় মামলা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া ইভিএম মেশিনটিও সোমবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরশ্যামপুরের ইউসুফ মেমোরিয়াল কেজি স্কুলের ভোট কেন্দ্র থেকে দুর্বৃত্তরা ইভিএম ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান হামলাকারীরা। তাদের ইটের আঘাতে দুই পুলিশ আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে রাত ৯টার দিকে পুলিশ পাশের আজিজুলের মোড় এলাকা থেকে এ ইভিএম পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অভিষেক বসাক বাদী হয়ে কাটাখালী থানায় মামলা করেছেন। এতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ আছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০-২০০ জনকে। কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল লতিফের সমর্থকরা হামলা করে কেন্দ্রে ভাঙচুর চালান। বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় একটি ইভিএম ছিনিয়ে নিয়ে যায়। অভিযান চালালে আজিজুলের মোড় এলাকার রাস্তার পাশে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। রাতেই এ নিয়ে মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহীদুল ইসলাম বলেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডালিম প্রতীক নিয়ে আবদুল মজিদ ৫৯৩ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উটপাখি প্রতীকে আবদুল লতিফ পেয়েছেন ৫৬৮ ভোট। ফলাফল ঘোষণার পর তার সমর্থকরা এ হামলা চালান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর