শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিপন্ন লজ্জাবতী বানর

মোস্তফা কাজল

বিপন্ন লজ্জাবতী বানর

নিজেকে গুটিয়ে রাখে লজ্জাবতী বানর। দেখতে অনেকটা নববধূর মতো। দিনের আলোয় দুই ঊরুর মাঝে মুখ গুঁজে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে রাখে। অতিবিপন্ন এ প্রজাতির বানরের স্বভাবে সামান্যতম বাঁদরামিও নেই। প্রায় সময় মাথা অবনত রাখে। মাঝেমধ্যে গাছের মগডালে পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে উল্টো ঝুলে থাকে। ঘনসবুজ বনে এদের বসবাস। চলাচল করে খুব ধীর ও স্থিরভাবে। দিনের বেলা বের হয় না। নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে। ঘোরাঘুরি করে না যত্রতত্র। নিজের এলাকা ছাড়তে বড্ড অনীহা।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো লজ্জাবতী বানরের ওপর মাঠ পর্যায়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। ২০১৭ থেকে ’১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদি এ গবেষণার ফল বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায়। লজ্জাবতী বানরের গবেষক হাসান আল রাজী চয়নের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল হবিগঞ্জের সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গা এবং মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও আদমপুর বনে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ কাজের তত্ত্বাবধান করেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের  জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফর। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ গবেষণা কার্যক্রমে দীর্ঘ দুই বছরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২৩, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৩৩, রেমা-কালেঙ্গা বনে আট ও আদমপুরে চারটি লজ্জাবতী বানরের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয় গবেষকদের। গবেষক দলের প্রধান হাসান আল রাজী চয়ন বলেন, আমরা কোনো নতুন ট্রেইল নির্মাণ করতে পারিনি। পুরনো যে ট্রেইল ছিল তা ধরেই জরিপ করেছি। যেহেতু এ বানর রাতের বেলা সক্রিয় থাকে তাই রাতেই পুরো গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১.৭৮, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ০.৮২, রেমা-কালেঙ্গা বনে ০.৩৬ ও আদমপুরে ০.১৩টি লজ্জাবতী বানর পাওয়া গেছে। এ হিসাব অনুযায়ী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৩০ থেকে ৩৮টি লজ্জাবতী বানরের অস্তিত্ব আছে। লজ্জাবতী বানর নিশাচর ও বৃক্ষবাসী। খুব বিপদে না পড়লে এরা গাছ থেকে মাটিতে নামে না। এদের সংরক্ষণের জন্য বনে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যাতে নিরবচ্ছিন্ন আচ্ছাদন থাকে। এরা খাদ্য গ্রহণ ও বিশ্রামের জন্য প্রায় সমান পরিমাণ সময় ব্যয় করে। মজার বিষয় হলো, মহিলা লজ্জাবতী বানর পুরুষের তুলনায় বেশি ঘুমায়। বিশ্রামও নেয় বেশি। শীতকালে এদের স্বাভাবিক চলাফেরা কিছুটা কমে যায়। রাতে সক্রিয় থাকাকালে প্রাকৃতিক বনেই বেশি থাকে। তবে খাবার খাওয়ার জন্য এরা লেবুবাগানে আসে। যেখানে জিগা গাছ বেশি থাকে। জেলির মতো দেখতে জিগা গাছের আঠা এদের সব থেকে প্রিয় খাবার। এদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাকৃতিক বন রক্ষার পাশাপাশি আঠা উৎপাদনকারী গাছ যেমন জিগা, বহেরা, রঙ্গি বনে আছে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর