সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

জিডিপির টার্গেট কমাচ্ছে সরকার

মানিক মুনতাসির

জিডিপির টার্গেট কমাচ্ছে সরকার

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক দেশই তাদের বিপর্যয় ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এরপরও বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাপকভাবে কমেছে কর্মসংস্থান। একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির কোনো সূচকেই ইতিবাচক অবস্থা নেই। নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। আর আয়ও কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এক ধাপে ৮.২ শতাংশ থেকে নেমে গেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, এখনো শতভাগ স্বাভাবিক হয়নি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এর ফলে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হচ্ছে। চলতি বছরের টার্গেট রয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য সরকার মনে করছে, চলতি অর্থবছর শেষে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অর্জিত হবে। যদিও এর সঙ্গে এক মত হয়নি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাই। করোনাভাইরাসের অচলাবস্থার কারণে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য ডিসেম্বর ২০২০ সময়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশই জিডিপিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে করোনা মহামারী সত্ত্বেও। সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির টার্গেট কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের আয়বর্ধন কর্মসূচি কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ব্যয় না কমিয়ে কীভাবে আয় বাড়ানো যায় এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সাশ্রয় করে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে বাজেটের অর্থ খরচ করা যায় সে ব্যাপারেও পরিকল্পনা কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছরের বাজেটের জন্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ কিছু কম থাকায় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিকই থাকবে। পাশাপাশি মানুষ অতিবিলাসী বা বিলাসী ব্যয়ও পরিহার করছে অনেকাংশে। যার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ খুব একটা বাড়বে না বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে আগামী বছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য দশমিক ০১ শতাংশ কমিয়ে ধরা হচ্ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে রীতিমতো বিতর্কে নেমেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছে। কোনো সংস্থারই প্রক্ষেপণ মিলছে না সরকারের সঙ্গে প্রাক্কলনের সঙ্গে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থাকলেও চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তা কমিয়ে ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেই তথ্যমতে, বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে সরকারি হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ২৪। কিন্তু বিশ্বব্যাংক মনে করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গত অর্থবছর প্রক্ষেপণ ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে আরেক জায়ান্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবির মতে, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছর যা ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এসব সংস্থার দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী করোনা-পরবর্তী আগামী বছর গিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াবে। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করবে বলে মনে করা হয়।

সর্বশেষ খবর