মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
পুলিশ হেফাজতে আইনজীবীর মৃত্যু

মাদক উদ্ধারের ঘটনা ভিত্তিহীন দাবি স্বজনদের

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে ধরার পরপরই নির্যাতন শুরু করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে মাদক উদ্ধারের দাবি করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাদক দেখানো হয়নি। গ্রেফতারের দুই ঘণ্টা পর তাকে হাজির করা হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। সেখানে তীব্র শীতের মধ্যে খালি গায়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। গ্রেফতারের পর অমানুষিক            নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী। এদিকে সহকর্মীকে পুলিশ নির্যাতনে হত্যা করেছে দাবি করে অভিযুক্ত পুলিশের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। পুরো ঘটনা তদন্ত করে আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।

গতকাল মহানগরের হামিদ খান সড়কের বাসায় গিয়ে দেখা যায় রেজাউল করিমের বিভিন্ন একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে বিলাপ করছেন বাবা-মা। স্বামী হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী মারুফা বেগম।

তিনি জানান, রেজাউলকে কারাগার থেকে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় রেজাউল তার ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ করেন উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। পুলিশের নির্যাতনে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে অভিযুক্তের বিচার চান তারা। স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন জানান, রেজাউল মাদকের কারবার করেন এমন কথা তারা শোনেননি। এসআই মহিউদ্দিন একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে দম্ভোক্তি করে কথা বলতেন। এদিকে রেজাউল করিমকে গোয়েন্দা পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে দাবি করে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। গতকাল জেলা জজ আদালতের সামনে এ মানববন্ধন হয়। এতে আইনজীবী সমিতির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মিলন ভূঁইয়া বলেন, রেজাউলকে গোয়েন্দা পুলিশ নির্যাতনে হত্যা করেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেজাউলের বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা পুলিশ কমিশনারের কাছে বিচার চাইতে চান। পুলিশ কমিশনার অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিনকে বরখাস্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও রেজাউলের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা নিতে আইনগত জটিলতা আছে উল্লেখ করে তাদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নাজমুল হুদা। পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, রেজাউলের পরিবারসহ স্বজনদের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্তে আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় আইনজীবী রেজাউল করিমকে মহানগরের সাগরদী হামিদ খান সড়ক থেকে ধরে নিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন।

 

সর্বশেষ খবর