শিরোনাম
বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সম্পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগ, মামলায় বিএনপি

অধিকাংশ প্রার্থীই ব্যবসায়ী, স্বশিক্ষিত থেকে এমএ পাসও রয়েছেন

গোলাম রাব্বানী

সম্পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগ, মামলায় বিএনপি

আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের অনেকেরই রয়েছে অঢেল সম্পদ। কোটিপতি মেয়র প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অনেক মেয়র প্রার্থীর নিজের নামের চেয়ে স্বামী-স্ত্রীর নামেই বেশি সম্পদ রয়েছে। অনেকে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়লেও তা নির্বাচনী হলফনামায় দেখাননি। এ ধাপের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতায় ‘স্বশিক্ষিত’ ও ‘স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন’ থেকে এমএ পাস প্রার্থীও রয়েছেন। সম্পদ বেশি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের। আর মামলা বেশি বিএনপির প্রার্থীদের। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচন কমিশন এখনো সব পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেনি।

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হওয়ায় মেয়র পদে চারজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৬১টি পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন ৩ হাজার ২২১ জন। আগামী ১৬ জানুয়ারি এ ধাপের ভোট গ্রহণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে মেয়র পদে ২১৪ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৩৪ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৭৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।

ঢাকার সাভার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আবদুল গনি। তিনি এইচএসসি পাস। বর্তমানে মামলা নেই। আগে একটি মামলা ছিল। তা নিষ্পত্তি হয়েছে। পেশা তার ব্যবসা। কৃষি থেকে তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ২০ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৪ টাকা। মেয়র হিসেবে সম্মানী ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং মুনাফা ২৬ হাজার ৭৪৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজের নামে নগদ ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৪১৮ টাকা, স্ত্রীর নামে ৬৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২২ লাখ ৮৭ হাজার ১১৩ টাকা। একটি ডেলিভারি ভ্যান ও দুটি গাড়ি রয়েছে। ১০ ভরি সোনা নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে ৫ ভরি। একটি শটগানও রয়েছে নিজের নামে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে অকৃষি জমি ২২ শতাংশ, স্ত্রীর নামে ১৬ শতাংশ। নিজের নামে একটি চারতলা দালান, ১৫টি টিন শেডঘর। ঋণ রয়েছে ৪০ লাখ টাকার। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. রেফাত উল্লাহ। তিনি এসএসসি পাস। পেশা তার ব্যবসা। তার নামে বর্তমানে ১৭টি মামলা রয়েছে। আগে একটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার বাড়িভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৮৩ হাজার  টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজের নামে নগদ টাকা (ব্যাংকে জমাকৃতসহ) ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৮০ টাকা। বন্ড রয়েছে ৩ লাখ টাকার। নিজের নামে ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকার সোনা রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমি ১ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার ২১৪ টাকার, স্ত্রীর নামে জমি ১৫.৫ শতাংশ। নিজের নামে দ্বিতল বাড়ি। ঋণ রয়েছে ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪০ টাকার। এ পৌরসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মোশারফ হোসেন। তিনি এসএসসি পাস। পেশা তার ব্যবসা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে ১ লাখ। সোনা রয়েছে ১০ ভরি। অকৃষি জমি রয়েছে ১০ শতাংশ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শামিমুল ইসলাম ছানা। তিনি এইচএসসি পাস। পেশা ব্যবসা। কোনো মামলা নেই। তার বার্ষিক আয় সম্মানী ভাতা বাবদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১২ লাখ ৭২ হাজার। স্ত্রীর নামে ৩ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে অকৃষি জমি ০.০৪২৭ একর। যৌথ মালিকানায় রয়েছে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট পৈতৃক বাড়ি। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. শামীম রেজা। তিনি বিএ পাস। ফৌজদারি মামলা রয়েছে চারটি। আগে তিনি পাঁচটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার পেশা ব্যবসা। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার। নিজের নামে রয়েছে ৪ লাখ টাকার ১০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমি রয়েছে ০.০৪২৭ একর। রয়েছে পৈতৃক পাকা বাড়ি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. সামছুজ্জামান অরুণ। তিনি বিএ পাস। পেশা ব্যবসা। তার কৃষি থেকে আয় ১৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে। স্ত্রীর নামে ৪০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ১২০ শতাংশ। স্ত্রীর নামে ২০০ শতাংশ। স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট রয়েছে দুটি। যৌথ মালিকানায় চারতলা ভবন রয়েছে। ঋণ রয়েছে ২১ লাখ টাকার। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আনিসুর রহমান। তিনি বিএ পাস। পেশা ব্যবসা। তার নামে মামলা রয়েছে পাঁচটি। কৃষি খাত থেকে তার আয় ১৫ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া থেকে আয় ২৪ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ২ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ৩ লাখ। স্থায়ী আমানত রয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সোনা রয়েছে ৫ ভরি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ৩ বিঘা, অকৃষি জমি ১৭ শতাংশ। একতলা পৈতৃক বাড়ি একটি। দুটি দোকানঘর। কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনামুল হক। তিনি এসএসসি পাস। পেশা ব্যবসা। মামলা নেই। কৃষি খাতে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৩ লাখ টাকা। সম্মানী ভাতা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে জমা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ৪০ ভরি সোনা রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ৩.৩৬ একর, স্ত্রীর নামে ২ একর, যৌথ মালিকানায় ১৫ একর। অকৃষি জমি যৌথ মালিকানায় ১ একর। রয়েছে নিজের নামে একটি দ্বিতল বাড়ি। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. রহমত আলী। তিনি বিএসএস পাস। পেশা ক্লিনিক ব্যবসা। মামলা রয়েছে পাঁচটি। আগেও মামলা ছিল ছয়টি। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ২ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ৫ তোলা সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ১.২০ একর, স্ত্রীর নামে ১.১০ একর, যৌথ মালিকানায় ৮ একর। অকৃষি জমি যৌথ মালিকানায় ২ একর। দোকান একটি। আধাপাকা বাড়ি একটি। কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. পারভেজ মিয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি। তিনি পেশায় সমাজকর্মী। মামলা নেই। তিনি কোনো আয়ের উৎস এবং বার্ষিক আয় দেখাননি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৩ শতাংশ অকৃষি জমি। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. ইসরাইল মিয়া। তিনি বিএ পাস। পেশা ঠিকাদারি ও সাধারণ ব্যবসা। তার নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে দুটি। আগেও দুটি মামলা ছিল। তার বাড়িভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৯ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে অকৃষি জমি, বাড়ি একটি। ঋণ রয়েছে ২০ লাখ টাকা (ব্যবসায়িক হাওলাত)।

সর্বশেষ খবর