বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষায় গতি আনাই চ্যালেঞ্জ

মহামারীতে স্থবির সবকিছু, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

আকতারুজ্জামান

শিক্ষায় গতি আনাই চ্যালেঞ্জ

করোনাভাইরাস মহামারীর আঘাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর জীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত শিক্ষাবছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাস দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণিতেও দেওয়া হয়েছে অটো প্রমোশন। সব মিলেই স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো শিক্ষা সেক্টর। এ অবস্থায় নতুন বছরে শিক্ষায় গতি ফিরিয়ে আনাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এ সেক্টরে গতি ফিরিয়ে আনতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনার বিস্তার ঠেকাতে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নির্ধারিত আছে। শিক্ষায় গতি ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আভাস দিয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুন মাসে এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-আগস্ট মাসে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে এর আগে এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস ‘পুনর্বিন্যস্ত’ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি  থেকে এপ্রিল মাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত স্কুল-কলেজে নিয়ে ক্লাস করানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। করোনা সংক্রমণের আগে প্রতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলছেন, সাড়ে ৯ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বইয়ের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা হলেও তা তেমন একটা কাজে আসেনি। সর্বশেষ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের চেষ্টা করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর-মাউশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনার দাবি অভিভাবকদেরও। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও করোনার প্রকোপে বন্ধ থাকায় বৃহৎ এ শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশোনাই ছিল বড় ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়ির পাঠেও মন বসেনি শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, বিধি-বিধান মেনে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষায় বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আগের ক্লাসের পড়াশোনার ঘাটতি থাকলে আগে সে জ্ঞান বিতরণ করতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এরপর চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান করতে হবে। আগের বছরের পাঠের ঘাটতি রেখে যদি চলতি বছরের পাঠদান করানো হয় তবে তারা পরীক্ষায় ফেল করবে, শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়বে। এ শিক্ষাবিদ বলেন, আগে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে তারপর পরীক্ষায় বসাতে হবে। পাঠদান না করে শুধু পরীক্ষায় বসিয়ে লাভ নেই। সরকারকে শিক্ষা খাতে গতি আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর প্রথমেই হোঁচট খেয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলপ্রার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস পরে তাদের ফল প্রকাশ করা হয়। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে সরকার অটোপাসের ঘোষণা দিলেও এ পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশ করতে পারেনি সরকার। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে- পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত আইন রয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। সহসাই এটি জারি করা হবে। এর পরই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এখনো ফল প্রকাশ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়াও আটকে আছে। ইতিমধ্যে ১৯টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিলেও অন্যরা এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। সবমিলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতেও বড় একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। কারণ, করোনা মহামারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পোহাতে হবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

সর্বশেষ খবর