শিরোনাম
বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাসানচর নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

ভাসানচর নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধুনিক স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই খালি পড়ে আছে। দুই দফায় ৩ হাজার ৪৮৯ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হলেও আরও ৯৫ হাজারেরও বেশি বসতঘর প্রস্তুত রয়েছে। তবে ভাসানচর নিয়ে রোহিঙ্গাদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। ইতিপূর্বে যারা ভাসানচরে গেছেন, তারা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং ভাসানচরের সামগ্রিক বর্ণনা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছেন। ফলে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মূলত যারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী, তাদের নাম তালিকাভুক্তির পর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত। চলতি শুষ্ক মৌসুমে আরও কয়েক দফা উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি সম্পূর্ণই নির্ভর করে রোহিঙ্গাদের সদিচ্ছার ওপর। তারা যতক্ষণ স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবেন না, তাদের কেউ প্রভাব খাটিয়ে সেখানে নিতে পারবে না। তবে ইদানীং ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্প মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে এবং সরাসরি এসে তারা তাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিগগিরই আরও এক দফা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন, তাদের কাছ থেকে ওখানকার পরিবেশ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে পেরে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নতুন করে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ভাসানচরে থাকার জন্য মানসম্মত নতুন পাকা বসতঘর এবং বসবাসের মতো স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়া ও টেকনাফের ঘিঞ্জি ঝুপড়ি থেকে শতভাগ স্বাস্থ্য ও বাসোপযোগী পরিবেশ পেয়ে তারা কিছুটা হলেও উদ্বাস্তু জীবনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) অলক বিশ্বাস জানান, ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৮৫ জন রোহিঙ্গাকে নোয়াখালী-সংলগ্ন দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়া হয়। প্রথম দল পাঠানোর ২৪ দিন পর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দলকে পাঠানো হয় ভাসানচরে। সেই দলে রোহিঙ্গা ছিলেন ১ হাজার ৮০৪ জন। প্রসঙ্গত, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়, যেখানে রয়েছে- শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বীপে কর্মরত দেশি-বিদেশি সংস্থার লোকজনের জন্য থাকার আলাদা ভবনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে ভাসানচরে। এ কাজের পুরো তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সর্বশেষ খবর