বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আবাসন সংকটে ভোগান্তিতে কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থী

হল বন্ধ থাকায় বিপাকে নারী শিক্ষার্থীরা, চাকরি হারিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন কর্মজীবী নারী

জিন্নাতুন নূর

করোনার কারণে গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। ঢাবির আবাসিক হলও বন্ধ। ফলে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা অনেকেই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা খন্ডকালীন চাকরি এবং টিউশনি করে নিজের হাতখরচ চালান হল বন্ধ থাকায় তাদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি ঢাকায় তিনটি টিউশনি করান। করোনার কারণে জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়িতে থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার টিউশনি শুরু করেছেন। কিন্তু হল বন্ধ থাকায় তিনি তার আরেক সহপাঠীর সঙ্গে রায়েরবাজারের এক গার্লস হোস্টেলে সিট নিয়েছেন। তবে নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা তার পছন্দ নয়। বিশেষ করে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের আচরণ ও খাবার তার ভালো লাগছে না। শুধু নারী শিক্ষার্থীই নয়, করোনাকালে আবাসন সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী নারীরাও। চাকরি হারানো অনেক কর্মজীবী নারী পুনরায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে নিজ এলাকায় পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। ঢাকার একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থায় কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে কাজ করতেন হুসনে আরা বেগম। ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় তিন রুমের ফ্ল্যাটে আরেক কর্মজীবী নারীর সঙ্গে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন। গত জুলাইয়ে চাকরি চলে গেলে দুই মাস চাকরি খোঁজার পর নিজ জেলা বগুড়ায় চলে যান তিনি। রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে শাহানা মাহমুদ নামের আরেক বেসরকারি এনজিওকর্মী তার বড় বোনকে নিয়ে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো পুরুষ অভিভাবক না থাকায় ১৫ হাজার টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া দুই বোনের কাছ থেকে বাড়ির মালিক ৩০ হাজার টাকা রাখছেন। উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে থাকছেন শাহানা ও তার বোন।

জনশক্তি জরিপ ২০১৭-১৮ অনুযায়ী শহরাঞ্চলে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজধানীতে কর্মজীবী নারীদের জন্য নীলক্ষেত, মিরপুর, খিলগাঁও এবং বেইলি রোডের চারটি হোস্টেলে মাত্র ১ হাজার ৮৬ জন নারীর থাকার ব্যবস্থা আছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার এসব মহিলা হোস্টেলে সহজে সিট পাওয়া যায় না। এসব হোস্টেলের কোনো কোনোটিতে একটি সিটের বিপরীতে কয়েক গুণ আবেদন জমা পড়ে। মেয়াদ শেষ হলেও পুরনো বোর্ডাররা সিট খালি করতে চান না। এতে সিটপ্রত্যাশী আবেদনকারীরা সহজে এসব হোস্টেলে থাকার সুযোগ পান না। ঢাকায় বর্তমানে ৭০০ থেকে ৮০০ বেসরকারি হোস্টেল আছে। এর সিংহভাগই নারীদের জন্য। তবে বেসরকারি হোস্টেলে খরচ কয়েক গুণ বেশি। সরকারি-বেসরকারি হোস্টেলের কোনোটিতেই আবার সন্তান রাখার ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি হোস্টেলগুলোর পরিবেশ ও খাওয়ার মান নিয়ে অধিকাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন। ঢাকার ফার্মগেট, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রী হোস্টেল আছে। তবে এসব হোস্টেল পরিচালনায় নেই কোনো নীতিমালা। কার্যকর নজরদারি না থাকায় যে যার মতো হোস্টেল খুলে এখন ব্যবসা করছেন। এর বাইরে কর্মজীবী নারী ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এখন রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে রুম বা গোটা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর জন্য ভাড়া বাবদ নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর