শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সমস্যার শেষ নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

রুহুল আমিন রাসেল

সমস্যার শেষ নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

সমস্যার শেষ নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তাদের পাশে যেন কেউ নেই। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা এখন করোনা মহামারীতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। নেই দরকারি পুঁজি। লকডাউনে পথে বসে গেছেন ব্যবসায়ীরা। তবু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তহবিল থাকলেও সরকারি প্রণোদনার ঋণও মিলছে না। প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন অংশীজনেরা।

জানা গেছে, করোনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে দ্বিতীয় দফায় আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন

ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য হলো, করোনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৫০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কমেছে পণ্যের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ চেয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাতের অতিক্ষুদ্র প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা লকডাউনে ঘরে বসে পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। তারা এখন নিঃস্ব। তবু অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে নেই। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুনিয়াজুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ। সামগ্রিক পরিস্থিতিই খারাপ। এ অবস্থা সহজেই কাটবে না। এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সরকারের উচিত হবে আরেকটা প্রণোদনা প্রদান করা। ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে কর রেয়াত দিয়ে পণ্যমূল্য কমাতে হবে। এফবিসিসিআইর আরেক সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ- এসএমই খাত বা ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে ব্যাংকগুলো নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকগুলো ভূমিকা রাখেনি। উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। তাদের মাত্র ২৪ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণসুবিধা পেয়েছেন। এ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ-সহায়তা প্রয়োজন। এখানে সরকারকে আরও বড় ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এটা না হলে এসএমইরা ঋণ পাবেন না। এফবিসিসিআইর অপর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘করোনা মহামারীতে সবকিছু ভ-ুল হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। সারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ছোট আর বড় যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কথা বলা হোক না কেন, তাদের বাজার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মতে, করোনাকালে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই করছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ, যারা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, তাদের সহজে ঋণ দিন।’ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অধিকাংশই ঋণ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অতিক্ষুদ্র অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ভ্যাট নিবন্ধন কিংবা ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি বা বাদামবিক্রেতা। এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ পুঁজি ২০ হাজার টাকা। এই পুঁজি ৬৬ দিনের লকডাউনে বাসা ভাড়া আর ভরণ-পোষণে শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের হাতে কোনো পুঁজি নেই।

এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে বাঁচাতে দ্রুত ঋণ দিতে হবে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সারা দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী পথে বসে যাচ্ছেন। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের পছন্দ না করলে ঋণ দেয় না। ব্যাংকগুলো সব সময় বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দ করে। তাদের শত শত কোটি টাকা দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। অথচ সারা দেশের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে গড়ে ১৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। সে হিসাবে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মচারী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর