শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় কমছে এডিপি

আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মূল এডিপির আকার প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ। চলতি বছরের বাজেটে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে বাড়বে ১০ শতাংশ, যা অন্য সময় বাড়ে অন্তত ১৮ শতাংশ

মানিক মুনতাসির

পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে প্রায় সব দেশে চলছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। একই কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিও থমকে আছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অবশ্য সরকারের আয় কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও হচ্ছে ঢিমেতালে। বৃহৎ প্রকল্পগুলো ছাড়া অন্য সব প্রকল্পের কাজে চলছে মন্থর গতি। আবার করোনার কারণে সরকারের পরিচালন বা অনুন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। ফলে আগামী বছরের বাজেটে এডিপির আকার কিছুটা কমিয়ে ধরা হচ্ছে। অবশ্য কমানো হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির টার্গেটও। সপ্তাহখানেক আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বাজেট মনিটরিং কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের ভার্চুয়াল সভা হয়েছে। সভায় আলোচনা হয়েছে বর্তমান ও আগামী অর্থবছরের সার্বিক বিষয়ে। সেখানে এসব প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। অথচ আগের বছর এডিপি বাড়ানো হয়েছিল ১৮-২০ শতাংশ। চলতি বছরের বাজেটে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগের বছর ২০১৯-২০ বাজেটে এডিপি বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য কভিড-১৯ পরিস্থিতি সামলাতে এবারের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ানো হবে। ৯টি অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এদিকে প্রশাসনিক অদক্ষতা, করোনার প্রভাব, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, গাফিলতি ও দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে চলতি বছর এডিপি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। অবশ্য এটাকে চিরাচরিত ব্যবস্থাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে প্রতি বছরই এডিপিতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট এডিপির ৩০ শতাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার যথাক্রমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯১ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৪ দশমিক ০২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯৩ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯১ শতাংশ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯৩ শতাংশ। এর প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের এডিপির বাস্তবায়নের হার আরও কমবে।

এদিকে এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আরএডিপি বা সংশোধিত এডিপি তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। সচিবদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। আগে থেকেই এডিপি বাস্তবায়নের সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগের পাশাপাশি পরিকল্পনামন্ত্রীর তৎপরতার মধ্য দিয়ে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

সরকার মনে করে, চলতি বাজেট ঘোষণার সময় ছিল করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের অচলাবস্থা। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তা ধরে রাখা যায়নি। বিশ্বব্যাপী আবারও শুরু হয় দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাণহানির পাশাপাশি করোনার এই সময়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে কর্মসংস্থান। বেড়েছে বেকারত্ব। দ্বিগুণ হারে বেড়েছে দারিদ্র্য। এ ছাড়া কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ফলে আসছে নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সভায় আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাসের টিকাসহ ৯টি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ৯ ইস্যুর সঙ্গে জড়িত খাতগুলোর জন্য বর্তমান বাজেট বরাদ্দের চেয়ে ১০ গুণের বেশি বরাদ্দ থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রথম দফায় দেওয়া ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় পরবর্তী প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আরও অর্থ বরাদ্দ করা হবে। এসব বিষয়ও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর