শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা

সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের লোনা পানির মাছ ‘সাদা দাতিনা’। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সাদাদাইতনা’ নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম

Pomadasys hasta|। ইংরেজি নাম Grunter Fish। দাতিনা মাছ যেমন সু-স্বাদু, তেমনি কাঁটাও কম। তাই চাহিদাও প্রচুর। কিন্তু দাম একটু বেশি। আমাদের দেশে সাদা, লাল ও স্পটেড জাতের দাতিনা মাছ পাওয়া যায়। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে দাতিনা মাছ। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মাছটির কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জন করেছে। সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই বাজারে দেখা মিলবে ‘সাদা দাতিনা’ প্রজাতির এ মাছের। ফলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হতে পারে।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গবেষণার জন্য এ মাছের পোনা খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্র প্রথমে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে স্থানীয় শিবসা নদী থেকে সংগ্রহ করে। পরে কেন্দ্রের পুকুরে প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্ত করে প্রজনন মাছে পরিণত করা হয়। দাতিনা মাছের এ প্রজাতিটি দেখতে সাদা ও গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের হয়। সর্বোচ্চ এক কেজি ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। সর্বাধিক প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। অর্থাৎ এ মাছটি শীতকালে প্রজনন করে। দুই বছর বয়সে ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজন হলেই এরা প্রজনন করতে পারে।

আরও জানা যায়, পরিপক্ব মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বাধিক পোনা উৎপাদন সফলতা অর্জন করে মৎস্য বিজ্ঞানীরা। হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনাকে এখন রটিফার জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। মিঠা পানির মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লোনা পানির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করানো কষ্টসাধ্য বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানান। লোনা পানির মাছের ক্ষেত্রে পোনার খাদ্য হিসেবে জীবন্ত খাদ্য প্রয়োজন হয়।

লোনাপানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, বিশ্বের দুয়েকটি দেশে দাতিনার খাদ্য, খাদ্যাভাস ও ডিম ধারণক্ষমতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে এর প্রজনন সম্পর্কিত কোনো গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় দাতিনা মাছের প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। চলতি বছরে মাত্র এক জোড়া প্রজনন সক্ষম দাতিনা মাছকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লক্ষাধিক পোনা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে দাতিনা মাছের পোনা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে ঘেরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে চাষ করা হয়। তাছাড়া, কোনো কোনো সময় জোয়ারের পানির সঙ্গে ঘেরে দাতিনার পোনা অনুপ্রবেশ করে। পরবর্তীতে চিংড়ির বাড়তি ফসল হিসেবে দাতিনা পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের ফলে পোনা প্রাপ্তি সহজ হবে। পাশাপাশি ঘেরে অন্য মাছের সঙ্গে চাষ করা সম্ভব বলে চাষিরা বেশি লাভবান হবে। সঠিকভাবে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছটির জীববৈচিত্র্যও সমুন্নত থাকবে।

সর্বশেষ খবর