সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৮ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক

প্রটোকল ও বিভাজনের রাজনীতিতে উৎকণ্ঠা

কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে কাউন্সিলর-এমপিদের মতামতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত, সম্মেলনের মাধ্যমে চায় তৃণমূল

রফিকুল ইসলাম রনি

‘প্রটোকল’ ও ‘বিভাজনের’ রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা। তারা বলেছেন, নেতাদের ‘প্রকোটল’ ও ‘বিভাজনের’ রাজনীতির কারণে দলে হাইব্রিড ঢুকে পড়েছে। দলের বৃহৎ স্বার্থে এগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে।

শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের ৪১ জন বক্তৃতা করেন। অধিকাংশ নেতাই সংগঠনকে হাইব্রিডমুক্ত করা, শীর্ষ নেতাদের প্রটোকল ও বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করার পক্ষে মত দেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. দিলীপ রায় বলেন, সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে এলেই ‘প্রটোকল’ দেওয়ার নামে হুড়োহুড়ি হয়। কে কার গায়ে ধাক্কা দেয় তার ঠিক নেই। এতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়। আমরা যারা মহানগরের নেতা আছি, তারা শীর্ষ (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) নেতাদের সম্মান জানিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনব। কিন্তু প্রকোটল রাজনীতির নামে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। এতে চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়।

এ সময় কয়েকজন নতুন সদস্য এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবেক কমিটির শীর্ষ নেতাদের দোষারোপ করে বলেন, তাদের সময় সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিল। আমরা সংগঠন করতে পারিনি। এখন কথা বলতে পারি। এ সময় অনেকেই হাত তালি দেন।

মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমাদের দোষারোপের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। হাততালির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সংগঠনের যদি বিশৃঙ্খলা থাকে তাহলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন                 চেয়ারের প্রশংসা সবাই করে। চেয়ার সরে গেলে বদনাম করে। এটা বন্ধ করতে হবে। সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ২০১৬ সালের কাউন্সিলের পর ২৪টি থানার মধ্যে ১৬টি থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এখন কেন্দ্র ভিত্তিক ও থানা কমিটি গঠন করতে হলে আমাদের দায়িত্ব দিতে হবে। তাহলে কাজ করা সহজ হবে। তাকে থামিয়ে দিয়ে সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল বলেন, ‘থামো, একসঙ্গে সব পাইতে চেও না।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের সম্মেলন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ৭৫তম জন্মদিন এই তিনটি একসঙ্গে পালন করা আমাদের বিরাট সুযোগ। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন প্রকাশনা ও প্রচারপত্র করা যেতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষিণের অধীনে ৮টি ইউনিয়ন ছিল। সেটাকে ভেঙে ১৮টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কিংবা মহানগর নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সিলর ও এমপিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন বলেন, কাউন্সিলর ও এমপিদের নিয়ে কমিটি গঠন করলে চলবে না। তারা ভোটের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীকারীদের নাম দেবে না। নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তির নাম দেবে। জবাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও এমপিদের সুপারিশ নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। কারণ তারা ভোটের মালিক। প্রসঙ্গক্রমে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আরও বলেন, আমি কমিটি জমা দিয়েছিলাম। কিছুই কাটতে পারেনি। এক-দুটো নাম ঢুকেছে। আর বিগত সময়ে যারা আমাকে মঞ্চেও উঠতে দেয়নি তাদেরও মাফ করে দিয়েছি।’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল বলেন, ‘দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। টিম গঠন করে কাজ করতে হবে। পকেট কমিটি নয়, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে।’ ব্যানার, পোস্টার ও ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ কেউ এক নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে লাগান। এটা বেমানান। সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গ্রুপিং তৈরি হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। মহানগর দক্ষিণের অধিকাংশ নেতাই দায়িত্ব বণ্টন এবং কমিটি গঠনে কাউন্সিলর-এমপিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবি করেন। মহানগর দক্ষিণের সদস্য ও কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিগত কমিটির সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত-আর সাধারণ সম্পাদক সংগঠনকে কুক্ষিগত করেছিল। ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন বলেন, বিগত সময়ে করা ওয়ার্ড থানা-কমিটিতে চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারীরা জায়গা পেয়েছে। যারা ওয়ার্ডের ভোটার না তারাও আছে কমিটিতে। এসব কমিটি এখন ভেঙে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে। রতনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও মহানগরের সদস্য রোকসানা ইসলাম চ্যামেলী বলেন, সবাইকে ঢালাও চাঁদাবাজ বলা ঠিক না। তারা যদি কমিটিতে থেকে থাকে, মিছিল মিটিংয়ে অংশ নেয় তাহলে আমাদের দলের নেতা-কর্মী। এটাকে স্বীকার করতে হবে। বৈঠকে আরেক সহসভাপতি বলেন, শীর্ষ নেতাদের প্রটোকল ও বিভাজনের রাজনীতি দূর করতে হবে। তা না হলে সামনে বিপদ আছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটি গঠনের আগেই দলীয় সভানেত্রী মহানগর শীর্ষ নেতাদের কাউন্সিলরদের রাখতে নিষেধ করে ছিলেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। আবার নতুন করে থানা-ওয়ার্ডের কমিটি গঠনে কাউন্সিলর ও এমপিদের সুপারিশ করা মানেই ‘মাইম্যানের নামে হাইব্রিড’ দলে ঢুকানো। এটা বন্ধ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর