মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়া সঠিক কিনা দেখতে হবে

-অধ্যাপক জিনাত হুদা

প্রযুক্তি উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়া সঠিক কিনা দেখতে হবে

বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তি বলতে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমের সহজলভ্য ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। আর এর ব্যবহার কেন্দ্র থেকে প্রান্ত, আবার শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলাফল খুব একটা ভালো হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার ফলাফলের সঙ্গে অনেকগুলো আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। ইন্টারনেটের সহজ ব্যবহার বা আকাশকে মুক্ত করে দেওয়ার অর্থই এই নয় যে, এখানে প্রযুক্তি ঢুকছে। এর সঙ্গে ঢুকছে একটি সংস্কৃতি, ব্যবস্থাপনা ও দর্শন। আর এসব গ্রহণের জন্য আমার সমাজ প্রস্তুত কি না তা  দেখতে হবে। আকাশ মুক্ত করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাজে দুই ধরনের তথ্য প্রবাহ হচ্ছে। এর একটি পাশ্চাত্য ধারার তথ্য যেখানে মুক্তচিন্তার কথা বলা হচ্ছে। এটি গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুত কি না তা ভেবে দেখতে হবে। এর সঙ্গে আমাদের সামাজিকীকরণ ও পারিবারিক মূল্যবোধ যায় কি না- সেটিও দেখতে হবে। আবার এত অবাধ মুক্ত স্বাধীনতা গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুত কি না- তাও ভেবে দেখতে হবে। আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কিন্তু আধুনিকতার নামে কেউ যদি পাশ্চাত্যের অন্ধ সংস্কৃতিকে অনুকরণ করেন তাহলে সেটি বিপদ ডেকে আনবে। পাশ্চাত্যে ১৮ বছর হলেই ছেলেমেয়েকে অভিভাবকরা স্বাধীন জীবনযাপন করতে দেয়। কিন্তু আমাদের সমাজ সে জায়গায় নেই। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে ঢুকে পড়ায় আমরা যখন সেই আবেগ দ্বারা তাড়িত হচ্ছি- তখন এক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে পাশ্চাত্যের ভালো জিনিসগুলো কিন্তু আমরা নিতে পারছি না। পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ তাও নিতে পারছি না। কিন্তু নারীকে যে পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে সেটি নিচ্ছি। শ্রেণিভেদে যে বৈষম্য- আমরা সেটিকে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আবার তথ্যপ্রবাহের আরেক ধাপে কট্টরবাদী সংস্কৃতি বা মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে নানা ধরনের ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। সেখানেও নারীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। নারীর এক কুৎসিত উপস্থাপনা সেখানে আমরা দেখতে পারছি। জিনাত হুদা বলেন, যে প্রযুক্তিকে আমরা হঠাৎ করে উন্মোচন করে দিয়েছি তার উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়া সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। আবার যে আকাশ সংস্কৃতিকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এর মধ্য দিয়ে যে কদর্যতার প্রকাশ ঘটছে তা বন্ধ করতে হবে। আবার প্রযুক্তির এত সহজলভ্যতার বিষয়টিতেও নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। একে একক প্রযুক্তি হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একে মাল্টিডাইমেনশনাল অ্যাপ্রোচ থেকে দেখতে হবে।

সর্বশেষ খবর