বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তিকে দূরে রেখে চলা সম্ভব নয়। আবার প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির এত বিকাশ ঘটেছে যে, কখনো কখনো তা ভয়ংকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। গত দুই দশকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে তা সামাল দেওয়ার মতো মানসিক প্রস্তুতি দেশের ছিল না। মূল সমস্যা হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম হঠাৎ করেই বেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে গেছে, যা তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। আবার এটি সমাজে এক ধরনের বেসামাল অবস্থাও তৈরি করছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি ও স্কয়ার হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতি পদে পদেই এখন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। আর তা না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি সমস্যা নয় এবং কোনো দিন ছিলও না। মানুষ ক্রমাগতই প্রযুক্তি নির্ভরশীল হচ্ছে। শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মানুষ প্রযুক্তি নির্ভরশীল হচ্ছে এবং এ থেকে নানা রকম সুবিধাও নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার মানুষের কল্যাণেই হওয়া উচিত। প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষের ক্ষতি হোক তা কখনই কাম্য নয়। কিন্তু প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ধরে রাখা ক্রমেই সারা বিশ্বের জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। যদি প্রযুক্তির এই প্রসার ধারাবাহিকভাবে হতো তাহলে হয়তো আজ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। তরুণ প্রজন্মেরও এত ক্ষতি হতো না। এই মনোচিকিৎসক বলেন, প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় হওয়ার পর একে আমরা অপ্রয়োজনেও ব্যবহার করছি। আবার তরুণ প্রজন্মের বিচার বিবেচনা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো হবে না। বয়স হিসেবে ব্যবহার করা অনুচিত হলেও এখন ছেলেমেয়েরা কম বয়সেই উচ্চমূল্যের স্মার্টফোন ক্রয় করছে। এক্ষেত্রে তাদের বিবেচনাবোধ ও আবেগ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নয়। আর তরুণদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যখন কমে আসে তখনই তাদের নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি অভিভাবকদের ওপর চলে আসে। অভিভাবকদেরও চাইলেই সন্তানদের সব আবদার পূরণ করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার করাও প্রযুক্তি আসক্তির পর্যায়ে পড়ে। আর এ ধরনের আসক্তি হলে ব্রেনের মধ্যে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ও বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে এই আসক্তি থেকে দূরে রাখা যায়- তা ভাবতে হবে।