বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আত্মসমর্পণ করছেন দম্পতিসহ নয় জঙ্গি

আলী আজম

স্বামী প্রকৌশলী, স্ত্রী চিকিৎসক। এই দম্পতির রয়েছে ফুটফুটে দুটি সন্তান। সুখের সংসার তছনছ করে দেয় জঙ্গিবাদের ঝড়। অনিশ্চয়তার কালো মেঘ গ্রাস করে পুরো পরিবারকে। আশার কথা হলো হারিয়ে যাওয়ার আগেই এই অন্ধকার সুড়ঙ্গে আলো ফেলেছে র‌্যাব। সংস্থাটির নতুন উদ্যোগ ডি-রেডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়ার আওতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে পরিবারটি। দীর্ঘ সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মাথা থেকে উগ্রবাদ ঝেড়ে ফেলা হয়েছে। এই পরিবারসহ মোট ৯ জঙ্গি র‌্যাবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে আজ। জঙ্গিবাদ অথবা উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের ক্ষেত্রে সফট অ্যাপ্রোচ হিসেবে বারবার ডি-রেডিক্যালাইজেশন শব্দটি বেশি উচ্চারিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিবাদ অথবা উগ্রবাদ ঠেকানো যাবে না। কারণ এটি একটি আদর্শিক লড়াই। মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে টার্গেট ব্যক্তিকে উগ্রবাদের অন্ধকার পথে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই অভিযানের পাশাপাশি ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে উগ্রবাদের কথিত আদর্শিক বিষয়কে মোকাবিলা করতে হবে। মার্কিন একটি গবেষণা জার্নালে দেখা গেছে, জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে আভিযানিক কার্যক্রম মাত্র ২৫/২৬ শতাংশ। বাকি পুরো প্রক্রিয়া জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক ও সামাজিক লড়াই, যার সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত থাকেন। বিভিন্ন দেশের আদলে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডি রেডিক্যালাইজেশন ইউনিট শুরুর উদ্যোগ নেয় র‌্যাব। বিশেষায়িত এই ইউনিট উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। এ প্রক্রিয়ার আওতায় প্রথম ধাপে ৯ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য রয়েছে। ‘নব দিগন্তে প্রত্যাবর্তন’ এই স্লোগান সামনে রেখে আজ (বৃহস্পতিবার) র‌্যাব সদর দফতরের আজাদ মেমোরিয়াল হলে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন একাডেমিশিয়ান, ইসলামী স্কলার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ উপস্থিত থাকবেন। র‌্যাব জানায়, এর আগে পাইলট প্রজেক্টের আওতায় সাত জঙ্গিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন হিজরত করে ঘর ছাড়ার পর র‌্যাবের পাইলট প্রজেক্টের আওতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার নজির রয়েছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওই ব্যক্তি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেবেন। তবে ৯ জঙ্গির মধ্যে একজনের নামে মামলা থাকায় আত্মসমর্পণের পর তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, আমরা ভেবে দেখেছি উগ্রপন্থায় যুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া আর কী করা যায়। শুধু অভিযানের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা কঠিন। কারণ জঙ্গিবাদ মানুষের মস্তিষ্কে থাকে। অপারেশনাল কার্যক্রমের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটনের জন্য ডি রেডিক্যালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করেছে র‌্যাব। সবার সমন্বিত উদ্যোগের ফলে জঙ্গিবাদের কথিত আদর্শকে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর