শিরোনাম
শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাথরুমে ফলস ছাদে কঙ্কাল রহস্যে একজন গ্রেফতার

মাহবুব মমতাজী

বাড়িতে একটা কঙ্কাল পাওয়া গেছে! পানির লাইনের মিস্ত্রির ফোনে এ কথা জানার পর আঁতকে ওঠেন রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা হানিফ সরকার। এমন কথা শুনবেন তিনি তা কোনো দিন কল্পনাও করেননি। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হানিফ সরকারের বাড়িতে পানির লাইন মেরামতের জন্য যাওয়া মিস্ত্রি ফোনে তাকে বলেন, ‘স্যার একটু নিচ তলায় আসেন।’ নিচে যাওয়ার পর তাকে মিস্ত্রি বলেন- ‘স্যার বাথরুমের ফলস ছাদের ওপর মনে হয় একটা লাশ পাইছি।’ এ কথা শুনে হানিফ বলেন- ‘ব্যাটা কী কস, পাগলের কথা।’

পলিথিন, সিমেন্ট আর কংক্রিট দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় মানুষের কঙ্কাল। কঙ্কালটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ কঙ্কাল উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এই কঙ্কাল রহস্য উদঘাটনে একজনকে গত ১২ জানুয়ারি গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান। তিনি ওই বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  ওই রাজমিস্ত্রিকে সন্দেহ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যে কঙ্কাল পাওয়া গেছে সেটি আসলে কার? ওই ব্যক্তি কে? তিনি নারী নাকি পুরুষ? কীভাবে তিনি মারা গেলেন? কে লাশটি এভাবে গুম করল?- এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত তিন মাস ধরে তদন্ত করছে সিআইডি। কঙ্কালটি উদ্ধারের পরই তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে সিআইডিতে পাঠায় মিরপুর থানা পুলিশ। জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে হানিফের বাড়ির নিচ তলায় পানির লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন মিস্ত্রি সেটি মেরামত করতে যায়। খুঁজে কোনো সমস্যা না পেয়ে সে বাথরুমের ওপরে ফলস ছাদে ওঠে। সেখানে পাইপ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেয়াল ভাঙে। এরপর দেখে প্লাস্টিকে মোড়ানো কিছু একটা। হানিফ সরকারের মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৩৮৯ নম্বর পঞ্চম তলা বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯০ সালে। এর তিন বছর পর তিনিই নিচ তলার প্রথম বাসিন্দা। বাড়ির ওপরের অংশ তৈরি হয়ে গেলে তিনি ওপরে উঠে যান। এরপর থেকে সেখানে মোট চারজন ভাড়াটিয়া উঠেছেন। একজন ভাড়াটিয়া দীর্ঘদিন ছিলেন। তার পরিবার চলে যাওয়ার পর একবার ফ্ল্যাটটিতে সংস্কার কাজও করা হয়েছে। সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পশ্চিম) বিশেষ পুলিশ সুপার (এস এস) সামসুন্নাহার এ প্রতিবেদককে বলেন, মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কঙ্কালটি যে বস্তায় ছিল সেখানে সিমেন্ট, বালু পাওয়া যায়। এসব আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় ওই রাজমিস্ত্রিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে একেক সময় একেক কথা বলছে। বলছে, সে ওই বাড়িতে নিয়মিত কাজ করত না। মাঝে মাঝে গিয়ে কাজ করত। ফরেনসিক পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে সেই কঙ্কালটি ছেলের। তবে আমরা ক্রস চেক করছি। কঙ্কালটি উদ্ধারের পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছে। মামলার পরই মিরপুর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, হত্যার পর খুনি শুধু পলিথিন দিয়ে লাশ মোড়ায়নি, চা পাতাও দিয়ে রেখেছিল। ফলে লাশের গন্ধ বের হয়নি। কঙ্কালের পাশে কোনো কাপড় বা এমন কিছু পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর