শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দীর্ঘ হচ্ছে নদী দখলদারের তালিকা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দীর্ঘ হচ্ছে নদী দখলদারের তালিকা

দীর্ঘ হচ্ছে নদী দখলদারের তালিকা। দেশের ৬৪ জেলায় এই দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৪৯ জন। এর আগে তালিকায় ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি নদী দখলদার খুলনা বিভাগে ১১ হাজার ২৪৫ জন। কম সিলেট বিভাগে- ২ হাজার ৪৪ জন। এর মধ্যে গত দুই বছরে ১৮ হাজার ৫৭৯ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। দেশে একসময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিল। দখল, দূষণ ও ভরাটে হারিয়ে গেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। বর্তমানে ৫ হাজার কিলোমিটারেরও কম নদীপথে চলছে নৌযান।

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার জানান, গত এক বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৫৭৯ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এক বছরে দখল ও দূষণকারীর তালিকা ৫৭ হাজার ৩৯০ থেকে ৬৩ হাজার ২৪৯-তে পৌঁছেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী খুলনা বিভাগে ১১ হাজার ২৪৫ দখলদারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৯০ অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৪৪ দখলদারের মধ্যে ২০১৯ সালে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭৬ জনের অবৈধ স্থাপনা। ঢাকা বিভাগে ৮ হাজার ৮৯০ দখলদারের মধ্যে নদীর জমিতে থাকা ১ হাজার ৪৫২ জনের ৫ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঢাকা জেলায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ইছামতি, বালু, বংশী, গাজীখালী, কালীগঙ্গাসহ ১১টি নদী ও ২০১টি খালের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। ঢাকা জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৮ জন; উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৯ জনের স্থাপনা। নারায়ণগঞ্জে ৯টি নদী ও ২১৮টি খাল রয়েছে। সেখানে নদী ও খাল দখলদারের সংখ্যা ৭৮৫ জন। মানিকগঞ্জ জেলায় নদীর সংখ্যা ১৬টি, খাল ১১৭টি; দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৩৯৯ জন। ফরিদপুর জেলায় ১৩টি নদী ও ১৫টি খাল রয়েছে; দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৪ জন। টাঙ্গাইল জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৮ জন। পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সক্ষমতা না থাকায় জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাশিত উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর উচ্ছেদ অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান জানান, নদী কমিশনের মাধ্যমে নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। আমরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী কেবিনেট সভায় নদী কমিশনের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব, যাতে এটি আরও গুরুত্ব পায়। তিনি জানান, নদী দখল ও দূষণ রোধে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০০ কোটি টাকা চেয়েছি। পাশাপাশি দুই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছি পরিকল্পনা কমিশনে। করোনার কারণে আমাদের কিছু কাজ পিছিয়ে গেছে। অর্থ ও প্রকল্পগুলো অনুমোদন পেলে আমরা যেসব কাজে পিছিয়ে গেছি তা কাটিয়ে উঠতে পারব।

জানা যায়, দেশে একসময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিল। ধারাবাহিক দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে হারিয়ে গেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। বর্তমানে ৫ হাজার কিলোমিটারেরও কম নদীপথে চলছে নৌযান। সারা দেশে ৫৩টি রুটের ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের জন্য ২০১২ সালে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৪টি রুটে ১ হাজার ২৪ কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৮ বছরে ৭৫ শতাংশ নদী খননকাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, সারা দেশের অভ্যন্তরীণ ৫৩টি নৌরুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন করে। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এক্ষেত্রে প্রথম দফায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ খনন করার কথা রয়েছে। নদী খননের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল হবে। প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। মেয়াদ জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ২৪টি নৌপথে ৯৯৭ লাখ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে ২ হাজার ৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন করা। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কমিয়ে ১০৮ কোটি করা হয়েছে। প্রথম কিস্তির ছাড় করা ৩৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকার মধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক  জানান, সারা দেশের নদীপথ উদ্ধারে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি নৌরুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় সারা দেশে নদী খননকাজ চলছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া গোমতী ও ব্রহ্মপুত্রসহ আগামী ৪-৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার নৌপথ উদ্ধার করা হবে।

সর্বশেষ খবর