শিরোনাম
শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ধামরাইয়ে করোনা চিকিৎসার ফাঁদ পেতেছে ভণ্ড সাধুরা

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

ঢাকার ধামরাইয়ে করোনা চিকিৎসার ফাঁদ পেতেছে ভ- সাধুরা। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। অনেক নারী হচ্ছেন ধর্ষণের শিকার। সাধুরা করোনাসহ সর্বরোগ সারানোর কথা বলে ঝাঁড়ফুঁক, পানিপড়া আর তাবিজ-কবজ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছে ভ- সাধুদের পাতানো কয়েক চামচা। জানা গেছে, ধামরাইয়ের চৌহাট গ্রামের নিতাইচন্দ্র পাল ওরফে নিতাই যিনি বছরকয়েক আগেও এলাকায় ঘুরে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। সেই নিতাই আজ মস্তবড় সাধু। যিনি সর্বরোগের চিকিংসা করেন ঝাঁড়ফুঁক আর তাবিজ-কবজ দিয়ে। তার নাম ডাক ছড়িয়েছে ধামরাই, পাশর্^বর্তী মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খালি গায়ে নারী-পুরুষের চিকিৎসা করে থাকেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। চৌহাট দক্ষিণপাড়া গ্রামের ওয়ারেজ মিয়ার ছেলে ভ- কবিরাজ সালাম গুলজার এক গৃহবধূকে চিকিৎসার নামে ঘরে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

জানা গেছে, নিতাই সাধু করোনাসহ বন্ধা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক- প্রেমিকাকে পাইয়ে দেওয়া, জিন-ভূত তাড়ানো, যেসব নারীর বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলির পাথর, প্যারালাইস, বাতের ব্যথা, হাঁপানি, একশিরা, যৌন দুর্বলতা, আলসার, স্বপ্নদোষসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করেন। আর এতে রোগের ধরন দেখে চিকিৎসার ফি নিচ্ছেন ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। এসব কাজ করে এখন প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। স্থানীয় কয়েকজন জানান, নিতাই পাগলের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে এক যুবক তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিমত, যে নিজের স্ত্রীকে রাখতে পারে না সে আবার বশীকরণের চিকিৎসা কীভাবে করে। তারা দ্রুত এসব ভন্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সরেজমিন দেখা যায়, নিতাই সাধুর বাড়িতে ভোরবেলায় তার ছাপড়া ঘরের আস্তানার সামনে পানির বোতল হাতে নিয়ে ধামরাই, সাটুরিয়া, মির্জাপুর, নাগরপুর এলাকার কয়েকজন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ঘরের ভিতর আসর বসিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে খালি গায়ে নিতাই পাগল রোগীদের ঝাঁড়ফুঁক এবং আধা লিটার বোতলে পানি পড়া দিচ্ছেন। যারা মাঝে মধ্যে পাগল হয়ে যান, তাদের দেওয়া হচ্ছে তাবিজ-কবজ। আর নারী রোগীদের কানে কানে বলছেন গোপন কথা।

নিতাইকে তার শিক্ষা কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। তবে নিজের নামটা লিখতে পারি। একপর্যায়ে নিতাই সাংবাদিকদের বলেন, অভাবের কারণে দুই বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। এখন নিজ বাড়িতে আসর বসিয়ে সর্বরোগের পানি পড়া দিয়ে যে টাকা পান তাতে তার কোনো অভাব হয় না।

সর্বশেষ খবর