রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হত্যা মামলার আসামি খালাস পাচ্ছে ২৮ কারণে

শুধু সাক্ষী সম্পর্কিত কারণেই খালাস হয় ৮৫ শতাংশ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সাক্ষীর অভাব, দুর্বল তদন্তসহ ২৮ কারণে খালাস পাচ্ছে বেশিরভাগ হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে শুধু সাক্ষী সম্পর্কিত কারণেই ৮৫ শতাংশ মামলার আসামি খালাস পাচ্ছে। পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) করা ‘বাংলাদেশের হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্তকরণ পরিস্থিতি’ শীর্ষক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার বিষয়ে পিবিআইর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামি খালাস পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে প্রায় এক বছর কাজ করে একটি টিম। দেশের ২০ বড় শহরে খালাস হয়েছে এমন ২৩৩টি মামলা পর্যালোচনা করা হয়। নিবিড় পর্যালোচনা শেষে হত্যা মামলার আসামি খালাস পাওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘কাউকে ছোট করতে নয়, মূলত মামলার তদন্ত দুর্বল দিকগুলো বের করতেই এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।’

জানা যায়, খালাস হওয়া ২৩৩টি মামলার ওপর গবেষণা চালায় পিবিআই, যার মধ্যে ৯৮টি মামলার ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ মামলার আসামি খালাস পেয়েছে শুধু সাক্ষী সম্পর্কিত কারণে। ৪৮টি মামলার মধ্যে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ শেষ হয়েছে আপসজনিত কারণে। ৪২টি মামলার মধ্যে ৩৬ দমশিক ২ শতাংশ মামলা খালাস হয়েছে তদন্তে ভুলত্রুটির কারণেঅ। ১৫ মামলার মধ্যে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ খালাস হয়েছে ময়নাতদন্ত বা মেডিকেল রিপোর্ট ভুলত্রুটির কারণে। ১৩টি মামলার মধ্যে ১১ দশমিক ২ শতাংশ খালাস পেয়েছে এজাহারের ভুলত্রুটির কারণে। ছয়টি মামলার মধ্যে ৫ দশমিক ২ শতাংশ মামলার আসামি খালাস হয়েছে জবানবন্দিজনিত ভুলত্রুটির কারণে, পাঁচটি মামলার মধ্যে প্রসিকিউশন মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যান্য কারণে মামলা খালাস হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। গবেষণায় হত্যা মামলার আসামিদের খালাসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রত্যক্ষ সাক্ষী আদালতে হাজিরে ব্যর্থতা, উপযুক্ত সাক্ষী নির্বাচন না করা, সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, সাক্ষীদের কোনো প্রণোদনা না থাকা, আসামিদের ভয়ে সাক্ষীর সত্য সাক্ষ্য না দেওয়া, বিচারকালে যথাযথভাবে সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারা, মৌখিক সাক্ষের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেওয়া, অদক্ষ কর্মকর্তা, তদন্ত কর্মকর্তার সততার অভাব, এজাহার, সুরতহাল, ব্যবহৃত অস্ত্র, ময়নাতদন্তের মধ্যে অমিল থাকা, তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগা, তদন্তে প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না থাকা, আলামত জব্দ  বা আদালতে উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়া, আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হলে নানা কৌশলে খালাস পাওয়া, তদন্ত কর্মকর্তার অদক্ষতা, বিশেষজ্ঞ মতামত ভিন্ন হওয়া, আপস হয়ে যাওয়া, বিচারে দীর্ঘ সময় লাগায় বাদীপক্ষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যথাযথ না হওয়া, প্রসিকিউশনের গাফিলতি, বাদীপক্ষ আর্থিক অক্ষমতায় ভালো আইনজীবী দিতে না পারা, মূল দোষীদের ছাড়াও অন্যদের আসামি করা এবং আসামিদের জামিন-পরবর্তী অপতৎপরতা। গবেষণায় নির্ভুল মামলা তদন্তের জন্য ৪০টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নির্ভুল এজাহার দায়ের, সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণ, তদন্ত কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, তদন্ত কর্মকর্তার সব লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা, ক্রাইম সিন সংরক্ষণ করা, দ্রুত তদন্ত শেষ করা, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রসিকিউশন, চিকিৎসক ও অন্য বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে টিম সভা করা, নির্ভুল তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া, স্থায়ী প্রসিকিউশন টিম, সঠিক সাক্ষী নির্বাচন করা, সঠিকভাবে আলামত সংগ্রহ করা, ভিডিও, অডিও রেকর্ডিং ও দালিলিক প্রমাণ দাখিল করা।

সর্বশেষ খবর