রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হাই অ্যালার্ট সারা আমেরিকায়

বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় মাথাপিছু ১৫ পুলিশ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে গিজগিজ করবে ন্যাশনাল গার্ড আর ক্যাপিটল পুলিশেরা। একেকজনের নিরাপত্তায় থাকবেন ১৫ জন পুলিশ অফিসার। ২ হাজার অতিথির জন্য ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং ক্যাপিটল পুলিশ ও ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশ মিলিয়ে আরও ৫ হাজার অফিসার থাকবেন ২০ জানুয়ারির শপথ অনুষ্ঠানে।

শুধু তাই নয় এ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্যে ক্যাপিটল হিল, হোয়াইট হাউসসহ আশপাশের সব এলাকায় মেটাল ও কংক্রিটের কঠিন ব্যারিকেড স্থাপন করার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তিন দিন আগে থেকেই ক্যাপিটল হিলসহ ওয়াশিংটন ডিসির পুরো এলাকা ন্যাশনাল গার্ডের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ সে এলাকায় যাচ্ছেন না। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউনের সময়েও এমন ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি হয়নি বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সবসময় এক ধরনের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে ৬ জানুয়ারির চেয়েও ভয়ংকর একটি পরিস্থিতির শঙ্কায়। সর্বশেষ ১৫ জানুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি সংবাদে পুরো প্রশাসনও অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশের গোয়েন্দারা মনে করছেন, ট্রাম্পের চরমপন্থি সমর্থকরা ২০ জানুয়ারি আরও সশস্ত্র অবস্থায় কংগ্রেসে হামলা চালাতে পারে। ভিতরে ভিতরে সে প্রস্তুতি চলছে। আমেরিকার ৫০টি স্টেটের রাজধানীতেও জঙ্গি হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনি অবস্থায় বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের আগেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি চলে যাবেন ফ্লোরিডায়। অর্থাৎ শপথ অনুষ্ঠানে বড় ধরনের গোলযোগের গ্রিন সিগন্যালের অংশ হিসেবেই তিনি হোয়াইট ছাড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এখন পর্যন্ত জো বাইডেনের বিজয়কে তিনি মেনে নেননি। তার ভাইস প্রেসিডেন্ট অবশ্য কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং শপথসহ ক্ষমতা গ্রহণের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সম্মতি দিয়েছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের লেলিয়ে দেওয়া জঙ্গিদের টার্গেট ছিলেন মাইক পেন্স। ইলেকটোরাল কলেজের ভোট সার্টিফাই করায় ট্রাম্পের ইঙ্গিতে পেন্সকে টার্গেট করা হয়েছিল বলে ওই হামলায় গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়েছে। আরও উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানেও সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের মধ্যে ২ লাখ আমন্ত্রণ পত্র বিতরণ করা হয়। সে স্থলে এবার একেকজনকে দুটি করে ইনভাইটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ কংগ্রেসম্যানরা মাত্র একজন করে অতিথি আনতে পারবেন। সর্বমোট ১ হাজার ৭০ জন থাকবেন অনুষ্ঠানে। শপথ অনুষ্ঠান দেখার জন্য ন্যাশনাল মলের সামনে লিঙ্কন মেমরিয়্যাল এবং ইউএস ক্যাপিটলের ভিতরে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটত। এবার সে সুযোগ নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যাশনাল মল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের পরিবর্তে সেখানে থাকবে ন্যাশনাল গার্ডের  সদস্যরা এবং যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাধুনিক সাজ-সরঞ্জাম। অর্থাৎ পুরো লকডাইনে চলে গেছে হোয়াইট হাউস এবং ক্যাপিটল হিল এলাকা। অথচ করোনা সত্ত্বেও পূর্বাহ্নে ঘোষণা করা হয়েছিল যে থার্ড স্ট্রিট থেকে ১৩ স্ট্রিট পর্যন্ত ন্যাশনাল মলের পুরোটাই আমেরিকার ১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ পতাকায় সজ্জিত করা হবে। অর্থাৎ ‘ফিল্ড অব ফ্ল্যাগ’ হিসেবে পরিণত করে করোনার জন্য আসতে না পারা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার প্রয়াস চালানো হতো। এখন সেটিও হবে না ৬ জানুয়ারির জঙ্গি হামলার কারণে। আগেই জানানো হয়েছে, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনেই এ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, জর্জ বুশ এবং বারাক ওবামা থাকবেন সস্ত্রীক। জিমি কার্টার এবং তার স্ত্রী আসবেন না স্বাস্থ্যগত কারণে।

২০ জানুয়ারির পরও ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তায় ১০ হাজারের অধিক ন্যাশনাল গার্ড থাকবে। এর মধ্যে ৬ হাজার ২০০ জন এসেছেন নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, নিউজার্সিসহ ছয় স্টেট থেকে। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত আকারে যেসব অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল, সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে। শপথ গ্রহণ ছাড়া অন্য সবকিছু ভার্চুয়ালে হবে। বাইডেন টিমের প্রযোজনায় ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৯০ মিনিটে ‘সিলেব্রেটিং আমেরিকা’ শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান সিএনএন, এবিসি, সিবিএস, এনবিসি এবং এমএসএনবিসিতে সম্প্রচার করা হবে। দীর্ঘ সময়ের এই অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচারের তহবিল গড়তে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৫ লাখ ডলার এবং করপোরেশন থেকে সর্বোচ্চ এক মিলিয়ন ডলার করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলে বাইডেনের অভিষেক কমিটি জানিয়েছে।

করোনায় যারা মারা গেছেন তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠান হবে। এরপর লিঙ্কন মেমরিয়্যালে লাইটিং করা হবে তাদের স্মরণে। একই সময়ে বাইডেনের সমর্থকদের নিজ নিজ এলাকাতেও মোমবাতি প্রজ্বলনের কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে।

ট্রাম্পের বিচার : জো বাইডেন ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবং কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ইউএস সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ৫১ ভোট হবে অর্থাৎ তারা হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। তার পরদিনই শুরু হবে ট্রাম্পের বিচার। জানানো হয়েছে যে, গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের পাস হওয়া ইমপিচমেন্টের আর্টিক্যাল স্পিকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএস সিনেটে সাবমিট করবেন ১৯ জানুয়ারি সিনেট অধিবেশন শুরুর সময়েই। সেই বিচারে সভাপতিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস জুনিয়র। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য (ম্যারিল্যান্ড- ডেমোক্র্যাট) জেমি বি রাস্কিন হচ্ছেন ইমপিচমেন্ট-ম্যানেজার। তিনি এরই মধ্যে ফেডারেল ক্রিমিনাল আইনে বিশেষভাবে অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি ব্যারি বারকে এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাটর্নি জসুয়া ম্যাটজকে কাউন্সেল নিযুক্ত করেছেন। ১৩ মাস আগে ট্রাম্পের প্রথম ইমপিচের ট্রায়ালেও এ দুজনই ছিলেন। এ বিচারে জুরিবোর্ডের সদস্য হবেন সব সিনেটর। সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সিনেটররা ভোট দেবেন ট্রাম্প দোষী কিনা সে ব্যাপারে। ডেমোক্র্যাটদের ৫০ ভোটের সঙ্গে লাগবে ১৭ রিপাবলিকান, তাহলেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে ইমপিচমেন্ট-আর্টিক্যাল চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে ট্রাম্প আর কোনো ফেডারেল পদ-পদবি পাবেন না। সিক্রেট সার্ভিসের সুবিধাও থাকবে না। অবসরকালীন ভাতার প্রশ্নই উঠবে না। পরবর্তীতে তিনি যে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াবেন সে অধিকারও হারাবেন। এটিও রিপাবলিকানরাও চাচ্ছেন। ট্রাম্পের মতো একজন বাজে লোককে রিপাবলিকান পার্টির সত্যিকারের সমর্থকরা দেখতে চান না বলে এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে।

সর্বশেষ খবর