রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রবাসেও বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিক

পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় অর্ধেক বেতন, কর্মঘণ্টাও বেশি নারীর

জিন্নাতুন নূর

দেশের মতো প্রবাসেও বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা মজুরি, কর্মঘণ্টা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিক থেকে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একজন পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় কাজ করতে গিয়ে দেশে নারী শ্রমিকরা যেসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েন, একইভাবে প্রবাসেও নানা নির্যাতন ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় নারীদের। অভিবাসী নারী শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করতে গিয়ে যে মজুরি পান তা পুরুষ শ্রমিকের বেতনের অর্ধেক। আবার কম বেতন পেয়েও নারীদের কোনো বিরতি ছাড়াই পুরুষ কর্মীর চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত ‘অভিবাসন ব্যয় জরিপ বাংলাদেশ ২০২০’ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এসব জানা গেছে।

জরিপে প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সময়কালে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মী অভিবাসী হন। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা চার লাখ। আর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই (৮৩.৮ শতাংশ) গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যান। এই নারীদের গড় বয়স ৩৩.৪। সাধারণত বিদেশে যাওয়া একজন নারী কর্মীর গড় নিয়োগব্যয় এক লাখ টাকা। আর তার মাসিক গড় আয় ১৮ হাজার ৩৩ টাকা, যা একজন পুরুষ কর্মীর মাসিক গড় আয়ের অর্ধেক। আবার নারী কর্মীদের নিয়োগব্যয় পুরুষ কর্মীর তুলনায় কম হলেও তা পুনরুদ্ধার করতে তাদের বেশি সময় (প্রায় ছয় মাস) লেগে যায়। যেখানে একজন পুরুষ কর্মীর মাসিক গড় আয় ৩২ হাজার ৫৪২ টাকা, সেখানে একজন নারী পান ২০ হাজার ২১১ টাকা। সৌদি আরবে একজন পুরুষের গড় মজুরি ২৫ হাজার ৮০০ টাকা, সেখানে একজন নারী পান ১৭ হাজার ৩০০ টাকা। আবার ওমানে একজন পুরুষ পান ২২ হাজার টাকা আর নারীর মজুরি ১৫ হাজার ৯০০ টাকা।

বেতন কম পেলেও একজন নারী শ্রমিককে প্রবাসে পুরুষ কর্মীর তুলনায় বেশিক্ষণ কাজ করতে হয়। যেখানে পুরুষ কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৬২ ঘণ্টা কাজ করেন, সেখানে একজন নারীকে সপ্তাহে গড়ে ৭৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আবার ৭৬.৩ শতাংশ পুরুষ সপ্তাহে এক দিন কাজের বিরতি পেলেও ৭৬.৩ শতাংশ নারীই সপ্তাহে সাত দিন ছুটিবিহীন কাজ করে যান। কাজ করতে গিয়ে পুরুষ কর্মীর তুলনায় নারীদের আঘাত পাওয়া বা অসুস্থ হওয়ার হারও বেশি। আর সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে ৪৫.৬ শতাংশ নারীই দেশে ফিরে আর বিদেশে যেতে চান না। অন্যদিকে পুরুষ কর্মীরা দেশে ফিরে ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান।

নারী শ্রমিকদের ৫২.৬ শতাংশ সৌদি আরবে, ৯.৮ শতাংশ ওমানে, ৪.৬ শতাংশ কাতারে, ০.২ শতাংশ সিঙ্গাপুরে, ০.২ শতাংশ মালয়েশিয়ায় এবং ৩২.৬ শতাংশ অন্যান্য দেশে কাজের জন্য যান। আর এই কর্মীদের মধ্যে মাত্র ৬.১ শতাংশ কাজে দক্ষ। তাদের মধ্যে ২৭.২ শতাংশ বিদেশি ভাষা ব্যবহারে সক্ষম। পুরুষদের তুলনায় সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্সে নারীরা বেশি অংশ নিলেও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে তাদের অংশগ্রহণের হার কম। ৫৬ শতাংশ নারীই ঋণ করে বিদেশে কাজ করতে যান।

জরিপের ফল বলছে, শহরের (৪.৯%) তুলনায়  গ্রাম (৯.৯%) থেকে বেশি নারী শ্রমিক প্রবাসে কাজ করতে যাচ্ছেন। আর এসব নারী শ্রমিকের অধিকাংশই পড়ালেখা করেননি। মোট নারী শ্রমিকের ৩১.৪ শতাংশ নারীই কোনো শ্রেণি পাস করেননি। আর ৪২.৭ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন। এই নারীদের ৬০.১ শতাংশ বিবাহিত আর ৩৭.২ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত।

সর্বশেষ খবর