সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

পরিবার নিয়ে দেখা যায় এমন ছবি নির্মাণ করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

পরিবার নিয়ে দেখা যায় এমন ছবি নির্মাণ করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখা যায় এমন ছবি যেমন তৈরি করতে হবে, তেমনি শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণও একান্ত জরুরি। এর মাধ্যমেই একজন শিশু তার জীবনকে দেখতে পারবে এবং আগামীর জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসস। ২০১৯ সালে ২৬টি ক্যাটাগরিতে ৩৩ জন শিল্পী এবং কলাকুশলীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পুরস্কার বিজয়ীদের মাঝে পদক, রেপ্লিকা, সম্মাননার চেক এবং সনদ বিতরণ করেন। পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রশিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সম্ভব সবকিছু করার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি বিজয়ের ইতিহাসকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অধিক হারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্য সচিব খাজা মিয়া স্বাগত বক্তৃতা করেন। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, চলচ্চিত্রশিল্পে সংশ্লিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ কলাকুশলীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত    অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রে শিল্প ও সংস্কৃতি যেমন থাকবে, তেমনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য উপকরণও থাকতে হবে। পাশাপাশি সেখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, নীতি-আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন থাকাটা দরকার। চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিবিদরা যত কথাই বলি না কেন একটি নাটক, সিনেমা বা গান বা কবিতা দিয়ে অনেক কথা বলা যায় এবং মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়। মনের গহিনে প্রবেশ করা যায়। সেজন্য এর একটা আবেদন রয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম চলচ্চিত্র। অথচ এটি কিন্তু দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এই ডিজিটাল যুগে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না করা হলে এর আকর্ষণ যেমন থাকে না, তেমনি বাজারও পাওয়া যায় না। সেজন্যই বিএফডিসিকে উন্নত করায় তাঁর সরকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ঢাকার কাছে কালিয়াকৈরের কবিরপুরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আধুনিক সিনেমা তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন সেই ধরনের সব সুবিধা রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কেননা, এখন ডিজিটাল যুগ। আমাদের চলচ্চিত্র কেবল দেশে নয়, বিদেশেও যাতে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা সেন্সর সংক্রান্ত আইন ও বিধি আধুনিকভাবে তৈরি এবং সেগুলো কঠোরভাবে যেন মানা হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিচ্ছি।

চলচ্চিত্রের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল : শেখ হাসিনা বলেন, ১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল আমরা তৈরি করব। যেখান থেকে অল্প সুদে টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স তৈরি করতে পারবে। তিনি বলেন, অনেকগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই সেগুলোকে পুনরায় চালু করা শুধু নয়, এর আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন অনেক উন্নতমানের সিনেমা তৈরি করা যায়। তেজগাঁও আসনের সংসদ সদস্য থাকার সময় বিএফডিসির সড়কটি নির্মাণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কাছেই থাকা কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারও ধীরে ধীরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। কাছেই থাকা হাতিরঝিলসহ আশপাশের এই এলাকাকেও সরকার সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চায়। এজন্য ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই শিল্প নষ্ট হয়ে যাক কখনো সেটা আমরা চাই না। আমাদের দর্শক টানতে হবে। মানুষ যাতে সিনেমা দেখে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই শিল্পের আধুনিকায়নে যা যা দরকার তাঁর সরকার সেসব কিছুই করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমি তো রয়েছিই সবসময় আপনাদের পাশে। কেননা এই এফডিসি আমার বাবার হাতে গড়া এবং এই সিনেমা তৈরির উৎসাহ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। কাজেই সেটি মাথায় রেখেই আমি সবসময় কাজ করি। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাতে সিনেমা শিল্প ভালোভাবে প্রচলিত হয়, মানুষ যেন বিনোদনের সুযোগ পায়, সে চিন্তা থেকেই আমরা ফান্ড সৃষ্টি করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুরক্ষায় চলচ্চিত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সনাতন চলচ্চিত্রের সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কার্যক্রম পুনরুদ্ধারকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার এজন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের শিল্পীরা উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন। সরকারপ্রধান বলেন, চলচ্চিত্রে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট ও কলকাতার সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে বিখ্যাত ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে সোহেল রানার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় চলচ্চিত্রশিল্পে নিয়োজিত নেপথ্য শিল্পীদের জন্য সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টির আবেদন প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২০’ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তদের সিআইপি (কালচারাল ইমপর্টেন্ট পারসন) হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টিও আলোচনা করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২০’ প্রণয়নে আমি নিজেই করার উদ্যোগ নিয়েছি কেননা আমার পরিচিত অনেক শিল্পীকেই দুর্দশাগ্রস্ত দেখেছি। দুর্দশাগ্রস্ত শিল্পীদের তিনি যেমন সহযোগিতা করেন তেমনি তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা অনলাইন পত্রিকা থেকে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য পেলে তাঁর নজরে আনেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আছি, এখন সাহায্য করছি। কিন্তু যখন থাকব না, তখন কী হবে সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২০ এই আইনটা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার জন্য ব্যবস্থা করেছি। যারা নেপথ্যে থেকে এই চলচ্চিত্রকে সুন্দর করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন, সেই যন্ত্রশিল্পী থেকে কলাকুশলী, মঞ্চসজ্জায় সম্পৃক্ত সবার বিষয়টাই তাঁর সরকার এই ট্রাস্টে রেখেছে। যাতে বিপদে-আপদে প্রত্যেকেই এই ট্রাস্ট থেকে অনুদান নিতে পারেন। তিনি এই ফান্ড সম্প্রসারণে চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর