মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সাত প্রকাশনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনসিটিবি

শর্ত লঙ্ঘন করে বইয়ের পৃষ্ঠা ও মূল্য বৃদ্ধি

আকতারুজ্জামান

অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে বইয়ের পৃষ্ঠা ও মূল্য বৃদ্ধির দায়ে সাত প্রকাশনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একই সঙ্গে প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকের অনুমোদন বাতিল করে কেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে সংস্থাটি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল করিম স্বাক্ষরিত এসব নোটিস বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এনসিটিবির অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করা প্রকাশনীগুলো হচ্ছে- লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড, কাজল ব্রাদার্স লিমিটেড, অক্ষরপত্র প্রকাশনী,  এ্যাবাকাস পাবলিকেশন্স, মুবীন পাবলিকেশন্স, আইডিয়াল বুকস ঢাকা ও আলফা প্রকাশনী। জানা গেছে, লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন প্রথম পত্রের মূল্য এনসিটিবি নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১৬৬ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ২৫০টি। কিন্তু অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে লেকচার পাবলিকেশন্স বইটির পৃষ্ঠা ৭৬৮টি নির্ধারণ করে ৩৯০ টাকায় বিক্রি করছে। এনসিটিবি বলছে, পাঠ্যপুস্তকের মূল্য ও পৃষ্ঠা সংখ্যা বৃদ্ধি সরকারি বিধি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮-এর পরিপন্থী। বইয়ের পৃষ্ঠা ও মূল্য বৃদ্ধি করার নিয়মবিরুদ্ধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর বোঝা ও পড়াশোনার ব্যয় বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এমনটাই এনসিটিবি চিঠিতে জানিয়েছে। একইভাবে কাজল ব্রাদার্স লিমিটেডকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা দ্বিতীয় পত্রের পাঠ্যপুস্তকের মূল্য ১১৭ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০০ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকাশনীটি শর্ত ভঙ্গ করে ৬৪০ পৃষ্ঠার বই ছাপিয়ে ২৭০ টাকা বিক্রি করছে। শর্ত অনুযায়ী অক্ষরপত্র প্রকাশনীর একই শ্রেণির জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র বইটি ২৭০ পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে ১৩২ টাকায় বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকাশনীটি বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০৪ নির্ধারণ করে ২৭৫ টাকায় বিক্রি করছে। শর্ত অনুযায়ী একই প্রকাশনীর পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের বই ৩০০ পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও এনসিটিবির শর্ত লঙ্ঘন করে তারা ৭৩৬ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করে ৩৬৫ টাকায় বিক্রি করছে। শর্ত অনুযায়ী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন প্রথম পত্রের বই ২৫০ পৃষ্ঠায় ও ১৬৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও এ্যাবাকাস পাবলিকেশন্স এনসিটিবির শর্ত লঙ্ঘন করে ৯০২ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করে ৩৬৫ টাকায় বিক্রি করছে। মুবীন প্রকাশনীর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র বইটি ২৭০ পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে ১৭৯ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও শর্ত লঙ্ঘন করে ৪৩৬ পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে তারা ২৩৬ টাকায় বিক্রি করছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র ৩০০ পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে ১৯৬ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও এনসিটিবির শর্ত ভঙ্গ করে আইডিয়াল বুকস ৮৫৬ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করে বইটি ৩৭০ টাকায় বিক্রি করছে। আলফা প্রকাশনীর উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র বইটি ২৮০ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করা হয়। প্রকাশনীটি এনসিটিবির শর্ত লঙ্ঘন করে ৪৪০ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করে বাজারে বিক্রি করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদিত পৃষ্ঠা ও অনুমোদিত মূল্যের বাইরে বই প্রকাশ করে বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি করছে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের বাড়তি পৃষ্ঠার বইয়ের বোঝা বইতে হচ্ছে, অন্যদিকে এসব বই কিনতে বড় অঙ্কের টাকার অপচয় হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া পুরো বই শেষ করতে গৃহশিক্ষক, কোচিং বা টিউশনির ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। ওই কর্মকর্তা জানান, এসব প্রকাশনীর কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব পাওয়ার পর সন্তোষজনক না হলে এনসিটিবি এসব বইয়ের অনুমোদন বাতিলের সুপারিশ করবে। কিছু প্রকাশনী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেকায়দায় ফেলতে এনসিটিবির শর্ত লঙ্ঘন করে সিন্ডিকেট করে এভাবে বই প্রকাশ করছে বলেও জানান তিনি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, শর্ত লঙ্ঘনের কারণে কিছু প্রকাশনীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। নোটিসের জবাব পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর