বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প, ব্যয় হবে ৪৮ কোটি টাকা

সচেতনতার পাশাপাশি নেওয়া হবে কঠোর আইনি পদক্ষেপ

নিজামুল হক বিপুল

ঘুম থেকে উঠে রাজধানীর সড়কে নামলেই গাড়ির হর্নের শব্দে রীতিমতো কান ঝালাপালা হয়ে যায় পথচারীদের। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই শব্দদূষণ তাড়া করে ফেরে নগরবাসীকে। শুধু রাজধানীবাসী নয়, সারা দেশের প্রতিটি নগর, জেলা সদরসহ ছোট-বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণ এখন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে এবার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি প্রকল্প নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এর মধ্য দিয়ে শব্দদূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নেওয়া হবে নানা কর্মসূচি। বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হবে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, স্টিকার, লিফলেট তৈরি করে প্রচার চালানো হবে। এ প্রকল্প নিয়েই আজ রাজধানীর পরিবেশ অধিদফতরে আয়োজন করা হয়েছে মতবিনিময় সভার। পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, শব্দদূষণের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ নামে একটি

প্রকল্প গ্রহণ করেছে পরিবেশ অধিদফতর। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, পরিবহন চালক ও শ্রমিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারখানা ও নির্মাণ শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ইমাম এবং বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ৬৪ হাজার, পরিবহন চালক ও শ্রমিক ১৯ হাজার ২০০, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩ হাজার ৮৪০, কারখানা ও নির্মাণ শ্রমিক ৩ হাজার ৮৪০, সাংবাদিক ৪৮০ এবং ৩ হাজার ৮৪০ জন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, ইমাম, শিক্ষক ও এনজিও কর্মী। তাদের সবাইকে শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি টেলিভিশনসহ (বিটিভি) তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে শব্দ সচেতনতামূলক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। একইভাবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হবে শব্দ সচেতনতামূলক টিভিসি, খুদে বার্তা ও বিজ্ঞপ্তি। তৈরি করা হবে ১২৮টি বিলবোর্ড, যেগুলো সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হবে। বসানো হবে ৬০টি সাইনবোর্ড। এর বাইরে শব্দ সচেতনতামূলক ৭ লাখ লিফলেট, ৭ লাখ স্টিকার, ১ হাজার ফোল্ডার ও ১ হাজার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ছাপিয়ে বিতরণ করা হবে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি এলাকায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের আওতায় পরিবেষ্টক শব্দমাত্রার সার্বক্ষণিক অনলাইন পরিবীক্ষণ ও রোড সাইড ডিসপ্লে স্থাপন করা হবে। কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত এলাকায় আয়োজন করা হবে নয়টি ক্যাম্পেইন। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে প্রকল্পের আওতায় ৫১২টি এয়ারমাফ এবং ৪ হাজার এয়ারফ্ল্যাগ সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে। ৬০০ কপি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিতরণ করা হবে এবং উদযাপন করা হবে ৩ হাজার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিমূলক প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে পরিচালনা করা হবে ২ হাজার ভ্রাম্যমাণ আদালত ও যৌথ অভিযান। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ সংশোধন করে করা হবে সময়োপযোগী। দেশের ৬৪ জেলায় শব্দের মাত্রা পরিমাপবিষয়ক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা ও তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে শব্দদূষণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির ওপর সমীক্ষা করা হবে। বিধিমালা-সংক্রান্ত এবং দিবসভিত্তিক নয়টি সভা করা হবে এবং প্রকাশ ও বিতরণ করা হবে প্রকল্প-পরবর্তী প্রতিবেদন, গবেষণা প্রতিবেদন ও জরিপ প্রতিবেদন। এ প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ও পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ূন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় সে বছর জুলাইয়ে। এরপর করোনার কারণে এ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা যায়নি। এখন আমরা শুরু করেছি। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হবে।’ তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রথমে হাসপাতাল, স্কুল ও আবাসিক এলাকাগুলোকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হবে। মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে শব্দদূষণ সম্পর্কে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সচেতনতার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে নেওয়া হবে কঠোর আইনি পদক্ষেপ। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ের চারপাশকে শব্দদূষণ মুক্ত এলাকা ঘোষণা করে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়েছিল পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু সে উদ্যোগ বেশিদূর এগোতে পারেনি। কিছু দিন চলার পর এ কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।

সর্বশেষ খবর