শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নেপথ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনের ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী। তবে গতকাল দুপুরের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনশনস্থলে জরুরি অবস্থার জন্য  অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কয়েক দফা অনশনস্থলে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করলেও তারা রাজি হননি। এদিকে ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্তের চূড়ান্ত নোটিসের জবাব দেননি অভিযুক্ত তিন শিক্ষক। অন্যদিকে দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি ছড়িয়েছে রাজপথেও। গতকাল তাদের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে শিববাড়ী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা।

যা কিছু নেপথ্যে : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ড. মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ মাসেই। তার কার্যকালের শেষ মুহূর্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনে নানা ঘটনা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনে দুই অধ্যাপকের পথ আটকানোর ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তিন শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে বরখাস্তের চূড়ান্ত নোটিস। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে খুবি কর্তৃপক্ষ যাতে চূড়ান্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে না পারে সে জন্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হচ্ছে বলে একটি পক্ষ মনে করে। খুবি উপাচার্য ড. মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন করেছে ৩০-৪০ জন। কিন্তু ওই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-কানুন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আন্দোলনে উসকানি দেওয়ায় তিন শিক্ষককে চূড়ান্ত নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যা-ই কিছু ঘটুক না কেন, তারা সার্বিক কর্মকান্ডের জন্য অনুশোচনা বোধ করলে সবকিছুরই শেষ হতে পারে।’ এদিকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী করতে নিয়োগে সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। নিয়োগ-বাণিজ্যে সুবিধা করতে না পেরে তৃতীয় পক্ষ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল শিববাড়ী মোড়ে মানববন্ধনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি উপাচার্য কর্তৃক নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য সুযোগ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। যারা ভিতরে আগে থেকে অস্থায়ী থাকেন, তাদের স্থায়ী করতে কিছুটা ছাড় থাকে।’ এদিকে বরখাস্তের চূড়ান্ত নোটিস পাওয়া বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে নোটিসের জবাব দিতে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র দেড় দিন। অথচ বিধি মোতাবেক কমপক্ষে সাত কার্যদিবস প্রাপ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট একটি পত্রিকার জন্য লেখা কবিতা-নাটকও সেন্সর করা হয়। অনুমতি ছাড়া বাধ্যযন্ত্র বাজানো যায় না। যিনি ক্লাস নেন তিনি পরীক্ষার খাতা দেখেন। এ কারণে দ্বিতীয় পরীক্ষণের দাবি জানানো হয়েছিল।’ এদিকে মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ পাল্টা বিবৃতিতে খুবিতে সৃষ্ট ঘটনায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করার আহ্বান জানিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, কতিপয় সুবিধাবাদী সংগঠন উসকানিমূলক বিবৃতিতে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা রাজনীতিমুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর